ব্যক্তিগত কিছু ব্যয়ের বেলায় বেশ উদার বিল গেট্স। বাড়ির পেছনে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করা এবং দামি গাড়ি পোর্শের পেছনে ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার ঢেলে দেয়া কোনো ব্যাপার নয় বিল গেট্স এর কাছে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য জিনিসে তার হাতের তালু ফসকে টাকা বের হয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিল গেট্স প্রচুর টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর ধরে সাধারণ বিমানে ভ্রমণ করেছেন।
বিল গেট্স নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য একটি কর্পোরেট জেট বিমান কেনেন ১৯৯৭ সালে। তবে এখনও ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাণিজ্যিক বিমানে সাধারণ যাত্রীদের আসনে ভ্রমণ করেন বিল গেট্স। আর ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করলে, এর খরচের টাকা কখনও মাইক্রোসফট থেকে নেন না বিল গেট্স।
”এটা এক ভালো দৃষ্টান্ত। বিমানে সাধারণ শ্রেণীতে টাকা কম লাগে। আর সাধারণ শ্রেণীতে গেলে যা, প্রথম শ্রেণীতে বসে ভ্রমণ করলেও তাই। আমি যদি মোটাসোটা বা অনেক লম্বা হতাম, তাহলে হয়তো এই আসন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। তাছাড়া এখানে আরেকটা ব্যপার রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১৪ সপ্তাহ বিমানে ভ্রশন করতে হয়ে আমাকে। মাঝেমধ্যে সাধারণ শ্রেণীর টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমাকে প্রথম শ্রেণীতে ডাকা হয়। কখনও এমন সুযোগ পেলে ফিরিয়ে দিই না।”
বিমানে যখন রাতভর ভ্রমণ করতে হয়, বিল গেট্স তখন প্রায়ই পেছনে গিয়ে একসারি খালি আসন খুঁজে বেড়ান। পেয়ে গেলে তো তোফা! হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমানো যায়।
বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন
বিল গেট্স বলেছেন, “এ সুযোগ পেলে প্রথম শ্রেণীর আসনের চেয়ে অনেক বেশি আরামে ভ্রমণ করা যায়।”
১৯৯২ সালের ঘটনা, বিল গেট্স তখন রীতিমতো বিলিওনিয়ার। বিমানে করে যাওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত সহকারি মেয়েটি জানাল, ঘেমে যাচ্ছে সে। তার একটু সাহাস্য প্রয়োজন। বিল গেট্স সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ”আমি তোমাকে সাহায্য করার কে? রানী নাকি?”
সময়ের ব্যাপারে খুবই মিতব্যয়ী বিল গেট্স। মাইক্রোসফটের যাত্রালগ্ন থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে আসছেন বিল গেট্স। এ কারণে তার চলাফেরায় সব সময় একটা ব্যস্ততা থাকেই। কখনও যদি তার বিমান সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকে, অফিস থেকে তিনি বেরোবেন ৯টা ৫০ মিনিটে। দ্রুতবেগে ছুটবেন বিমান বন্দরের দিকে। প্রায়ই এমন পরিস্থিতি হয়, বিমানের দরজা বন্ধ করার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে গিয়ে হাজির হন বিল গেট্স। ঝুঁকি নেবেন, তবু আগে গিয়ে বসে থেকে সময় অপচয় করবেন না।
সময় বাঁচানো প্রসঙ্গে বিল গেট্স বলেছেন:
”যখন কোনো সভায় যোগ দিতে যাই, নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থাকে মাথায়। কাজেই খুব বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করতে হয় না। বিশেষ করে যে কলিগদের সম্পর্কে খুব ভালো করে জানি, তাদের সঙ্গে বৈঠকে সময় অপচয় হয় না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়াচ্ছে, কাজেই সময় নষ্ট করব কেন?”
মাইক্রোসফটের অন্যতম সেরা প্রোগ্রামার চালর্স সিমোনি বলেছেন, ”বিল গেট্স কখনও একটা জিনিস দুবার ব্যাখ্যা করেন না।”
বিল গেট্স বলেন:
”যেহেতু কাজ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই, কাজেই দুটো কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। এই যেমন- একসঙ্গে প্যাডাল মেরে ব্যায়াম করা এবং পত্রিকা পড়া। দুটো কাজই নিখঁতভাবে করতে পারি। এটা একসঙ্গে একাধিক কাজ করার খুবই বাস্তববাদী কৌশল।”
বিল গেট্স বলেছেন, “এখন যেহেতু তার পরিবার রয়েছে, কাজেই রাতভর কাজ করা আর সম্ভব নয়। ঘুমানোর জন্য আলাদা বিশেষ কোনো সময় নেই তার। ফাঁক পেলে তাৎক্ষনণকভাবে ঘুমিয়ে ঝেড়ে ফেলেন ক্লান্তি।”
বিল গেট্স বলেছেন:
”যারা প্রতিদিন রাতে তিন-চার ঘন্টা করে ঘুমান, তাদের আমি ঈর্ষা করি। কারণ তারা কাজ করার প্রচুর সময় পান। বেশি করে শিখতে পারে। খেলতে পারে।”
বিল গেট্স এর কাজের ধরন সরাসরি এবং সাদাসিধা। কোম্পানির শুরু থেকে তিনি একভাবে কাজ করে আসছেন। সেকেলে রীতি অনুসরণ করে কোনো সেক্রেটারি রাখেন না বিল গেট্স। অবশ্য বিভিন্ন আয়োজনের জন্যে তার একজন অ্যাসিট্যান্ট বা সহকারি রয়েছে।
বিল গেট্স জানিয়েছেন :
”আমার যত ইলেকট্রনিক মেইল- সব সরাসরি চলে আসে। আমি নিজে এসব মেইলের উত্তর দিই। আমার সব মেমো এবং চিঠি নিজে টাইপ করি। আমার অফিসকক্ষের বাইরে যে প্রশাসনিক সহকারি বসেন, তার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ টাইপ করি আমি।”
বিল গেট্স প্রতিদিন সময়টাকে ঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন কিনা, স্টিভ বলমার তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। এতে সঠিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় বিল গেট্স এর।
বিল গেট্স বলেছেন :
”কোম্পানির যেসব জিনিস থেকে আমি শতাংশ আয় হয়, সেসব জিনিসের প্রতি গভীরভাবে মন দিই আমি।”
সময় এবং টাকা বাঁচানোর ক্ষেত্রে বিল গেট্স এর মিতব্যয়ী স্বভাবটাই বেশি কাজ করে।
বিল গেট্স বলেছেন :
”একটা জিনিসকে ঠেলে একেবারে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পছন্দ করি আমি। এতে প্রায়ই উঁচুমানের কাজ পাওয়া যায়।”
0 comments