কালের গর্ভে আমরা অনেক মহান ব্যক্তিকে হারাতে বসেছি। কিন্তু এককালে তাদের অবদানের কারনেই আজ আমরা এ স্থানে আসতে পেরেছি। সেসব মানুষের মধ্যে এরিষ্টটল অন্যতম। চলুন আজ তার সম্পর্কে জানি।
বিশ্ববিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডার দুঃখ করে বলেছিলেন, জয় করাবার জন্য পৃথিবীর আর কোন দেশই বাকি রইল না। তাঁর শিক্ষক মহাপন্ডিত এ্যারিষ্টটল সমন্ধেও একই কথা প্রয়োজ্য। জ্ঞানের এমন কোন দিক নেই, তিনি যার পথপ্রদর্শক নন। তাঁর Poetics গ্রন্থে তিনি নাট্যতত্ব ও কাব্যতত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক তিনি। তিনি বহু দার্শনিক তত্বের প্রবক্তা। তাঁর চিন্তা জ্ঞান মনীষা প্রায় দুই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছিল।
এরিষ্টটল ৩৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসিডনিয়ার নিকটবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা নিকোম্যাকাস ছিলেন মেসিডনিয়ার রাজ দরবারের একজন চিকিৎসক। শৈশবে ঘরেই পড়াশোনা করেন এ্যারিস্টটল। ১৭ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিযে গৃহত্যাগ করেন।
৩৬৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্স যান এবং প্লেটোর ‘একাডেমিতে’ পড়াশোনা শুরু করেন। সেই সময় এথেন্স ছিল শিক্ষার কেন্দ্র। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গড়ে তুলেছেন নতুন এ্যাকাডেমি। সেখানে ভর্তি হলেন এ্যারিস্টটল। অল্প দিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন এ্যাকাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। প্লেটোর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ বিশ বৎসর তিনি প্লেটোর একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। এরপর এথেন্স নগরী ত্যাগ করে এশিয়া মাইনরে চলে যান।
শিক্ষাদান ছাড়াও নানান বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন এ্যরিস্টটল। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতিবিজ্ঞন, জীববিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও অজ্ঞত ছিল না। পুত্র আলেকজান্ডারের জন্ম সময়েই তাঁর শিক্ষার ভার অর্পণ করেন এ্যরিস্টটলের উপর। তখন এ্যারিস্টটল আটাশ বছরের যুবক। আলেকজান্ডার যখন তেরো বছরের কিশোর, রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে এ্যারিস্টটল এসে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করলেন। শ্রেষ্ঠ গুরুর দিগ্বিজয়ী ছাত্র। বহু প্রাচীন ঐতিহাসিকের ধারণা এরিস্টটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারে অদম্য মনোবল আর লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে একজনের ছিল সমগ্র পৃথিবীকে জয় করে তার উপর প্রভুত্ব করবার প্রবল ইচ্ছা। অন্য জনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন জগৎ অাবিস্কার করে মানুষের জন্য তাকে চালিত করার ইচ্ছা। এ্যরিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধা। শুধু পুত্রের শিক্ষক হিসেবে নয়, যথার্থ জ্ঞানী হিসেবেও তাকে সম্মান করতেন। এ্যারিস্টটলের জন্মস্থান স্তাজেইরা কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার বহু মানুষ বন্দি জীবনযাপন করছিল। রাজা ফিলিপ এ্যারিস্টটলের ইচ্ছায় শত্রু সেটার হাত থেকে শুধু স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুললেন।
এ্যারিস্টটল একদিকে ছিলেনে উচ্চমানের জ্ঞানী, অন্যদিকে সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন, “পিতার কাছে পেয়েছি আমার এই জীবন, আর গুরুর কাছে শিক্ষলাভ করেছি; কী ভাবে এ জীবনকে সার্থক করা যায় তার জ্ঞান।” এ্যারিস্টটল যখন জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার কাজ করছিলেন আলেকজান্ডার তাঁর সাহায্যের জন্য বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন মাছ, পাখি, জীবজন্তুর জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠানো। দেশ-বিদেশের যেখানেই কোন পুঁথি পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যেত, আলেকজান্ডার যে কোন মূল্যেই হোক পুঁথি পান্ডলিপি সংগ্রহ করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন।
আলেকজান্ডার যখন এশিয়া জয়ের নেশায় সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন, এ্যারিস্টটল ফিরে গেলেন এথেন্সে। তখন এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পীঠস্থান। এখানেই স্কুল স্থাপন করলেন এ্যরিস্টটল। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর। ৩৩৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এরিষ্টটল তার নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘লাইসিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইসিয়ামে সাধারনত বাস্তব গবেষনার উপর জোর দেয়া হত। বস্তত ঞ্জান ও গবেষনার সংগঠক এরিষ্টটল দস্তুর মত একটি জীব গবেষনাগার তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার পরিচয় লাভের জন্য এরিষ্টটল ১৫৮ টি রাষ্টের সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সংবিধানের একটি গ্রন্থাগারও তার লাইসিয়ামে গড়ে তোলেন।
আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হল। এতদিন বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় যে জীবন যাপন করতেন, তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না এ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এ স্বেচ্ছানির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি এরিস্টটলকে। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বে ৬২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
অবশেষে ৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৬৩ বছর বয়সেই তিনি মৃত্যু বরন করেন।
এ্যরিস্টটল সমস্ত জীবন ধরে যে সমস্ত রচনা করে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে তা তাঁর শিষ্য থিওফ্রাস্তাসের হাতে দিয়ে যান। থ্রিওফ্রাস্তাসের পর সেই সমস্ত রচনাবলির উত্তরাধিকারী হন তাঁর শিষ্য নেলেওস। নেওলসের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্ররা সেই সমস্ত রচনাবলিকে লোহার সিন্দুকে পুরে এ্র্যারিস্টটলের সমাধির নিচে পুঁতে রাখেন। দুশো বছর পর রোমের সেনাবাহিনী যখন গ্রিস দখল করে তখন সেই পুঁধি উদ্ধার করে রোমে নিয়ে আসা হল। সমস্ত রচনাই জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বহু প্রচেষ্টায় সে সমস্ত পুঁথির অনুলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং তার ভিত্তিতেই এ্যারিস্টটলের রচনাবলি প্রকাশিত হয়।
বিষয়বস্তুর নিরিখে এ্যারিস্টটলের রচনাবলিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, অলংকারতত্ব, কাব্যত্ব। এ্যরিষ্টটলের রচনার সংখ্যা এ হাজারের কাছাকাছি। তবে এর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সমান্য যা কিছু পাওয়া গেছে তা থেকেই অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, কি ব্যাপক ছিল তাঁর প্রতিভা। ভুল-ত্রুটি থাকা সত্বেও তিনিই প্রথম মানুষের কাছে জ্ঞানের মশালকে তুলে ধরেন।
এ্যারিস্টটলের রচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল মেটাফিজিক্স (অধিবিদ্যা) এবং এথিক্স (নীতিশাস্ত্র)। এই বইগুলির মধ্যে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন, জীবন গতিশীল এবং ক্রমাগতই তার বিকাশ ঘটছে। এই সমস্ত রচনার মধ্যে অনেক নির্ভুল তত্ত্ব থাকলেও জ্যোতিবির্জ্ঞান ও পদার্থ বিদ্যার ক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে কল্পনার ও অযৌক্তিক ধারণার প্রভাবই বেশি। এর কারণ কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তিনি এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। যেমন তিনি বলতেন, যদি একই সাথে একটি ভারি ও হালকা বস্তুকে উপর থেকে ফেলা হয় তবে ভারী বস্তুটি আগে পড়েবে। বহু শত বছর পর গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন (পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে) দুটি বস্তুই একই সাথে মাটিতে পড়ব্ এছাড়া তিনি বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই স্থির। তাকে গতিশলি করবার জন্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্র্রেও এ্যরিস্টটলের আধিকাংশ মতামতই ছিল ভ্রান্ত। এ্যরিস্টটল লিখেছিলেন পৃথিবী স্থির। তাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের চাঁদ, তারা, সূর্য জ্যমিতিক পথে ঘুরছে। গ্যালিলিও প্রথমে এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। তাঁর অভিমত ছিল, চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। উত্তরকালে প্রমাণিত হয়েছে-চাঁদের কোন আলো নেই।
তাঁর এসব ভ্রান্ত মতামত কয়েক শতাব্দী ধরে সমাজকে চালিত করেছে। তার জন্য এ্র্যরিস্টটলকে অভিযুক্ত করা যায় না। উত্তরকালের মানুষেরই দায়িত্ব ছিল তাঁর গবেষণার সঠিক মূল্যায়ন করা। কিন্তু সে কাজে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। এ সমস্ত ভ্রান্তি থাকার সত্বেও এ্যরিস্টটল মানব ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠতম প্রাজ্ঞ-যার সৃষ্ট জ্ঞানের আলোয় মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, মহত্তর পর্যায়ে উন্নত করেছে।
এরিষ্টটল অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হচ্ছে-
- The Politics;
- The Megna Moralia;
- The Constitution of Athens;
- The Ethics;
আমরা আজ The Politics গ্রন্থটি কিছুটা বিশ্লেষণ করবোঃ-
Politics গ্রন্থে রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় চিন্তার পূর্নবিকাশ সাধিত হয়েছে। আটটি পুস্তক সমন্বয়ে রচিত এই গ্রন্থের বিষয় ও পুস্তক বিন্যাস যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। এই বিভ্রান্তির কারনে অনেকে মনে করেন যে, Politics এর বর্তমান পান্ডুলিপির বিন্যাস এরিষ্টটল নিজ হাতে করেননি। প্রধানত এই কারনেই Politics কে অসম্পুর্ন গ্রন্থ বলে মনে করা হয়। Politics গ্রন্থে দেখা যায়, রাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পুস্তকে আলোচনা করেছেন যা সুস্পষ্ট ভাবে বিন্যাস হয়নি। Politics পুস্তকের বিন্যাসের এই এলোমেলো ক্রমের প্রধান কারন হল, তিনি তার গ্রন্থ খানি সাধারন্যে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে রচনা করেননি। প্রকাশনার উদ্দেশ্যে তিনি যদি তার পান্ডুলিপিটি পুনঃ পর্যালোচনা করার সুযোগ পেতেন তাহলে সম্ভবত বিন্যাসের এই ত্রুটি থাকত না এবং তাতে পাঠক সমাজের অসুবিধার কোন কারন হত না।
এরিষ্টিটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। তিনিই প্রথম রাজনৈতিক অধ্যয়নকে বিঞ্জান পদবাচ্য করে তোলেন। এরিষ্টটল যখনই যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলেন তখনই তাকে ইতিহাস ও বাস্তব অভিঞ্জতার প্রেক্ষিতে যাচাই করেছেন। বস্তুত তার Politics গ্রন্থটি মূলত প্রায় দেড় শতাধিক রাষ্ট্রের বাস্তব শাসন ব্যবস্থার পর্যালোচনলব্ধ অভিঞ্জতার ভিত্তিতে গঠিত হয়। এরিষ্টটলের পদ্ধতি ছিল মূলত আরোহ প্রকৃতির (Inductive)। এই পদ্ধতির মূল কথা হল প্রথমে একটা প্রকল্প বা অনুমান গ্রহণ করা এবং পরে থাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে নানা প্রকার তথ্য সংগ্রহ করা। এগুলো পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তিনি ইতিহাস সমর্থিত ঘটনা সমূহের তুলনামূলক (Comparative) বিশ্লেষনের পদ্ধতি অনুসরন করেন। এরিষ্টটল অনুসৃত পদ্ধতিকে অভিঞ্জতামূলক (Empirical) পদ্ধতিও বলা যায়। তাছাড়া এরিষ্টটল তার অনুসৃত পদ্ধতিতে উদ্দেশ্যবাদের (Teleology) উপর যথেষ্ট গুরুত্ত আরোপ করেন।
যেহেতু ‘The Politics” গ্রন্থের পুস্তক বিন্যাস এলোমেলোভাবে সাজানো, তাই আমরা পুস্তক অনুসারে পর্যালোচনা না করে বিষয়বস্তু অনুসারে পর্যালোচনা করছি। Politics গ্রন্থে রাষ্ট্রের প্রকৃতি, রাষ্ট্রের উদ্ভব, তার উপাদান, রাষ্ট্রের অধিবাসীদের শ্রেনীবিভাগ, তার শাসন ব্যবস্থার সংবিধান, শাসন ব্যবস্থার প্রকারভেদ, শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক, শাসক ও নাগরিকের সংঞ্জা, দাসব্যবস্থের পক্ষে যুক্তি প্রদান, রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার অস্থিরতা, বিদ্রোহ ও বিপ্লবের সম্ভাব্য কারন এবং সে কারন প্রতিরোধের উপায়- এই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
এরিষ্টটল রাষ্ট্র ও সংবিধান বলতে এক জিনিস বুঝিয়েছেন। সংবিধানের সংঞ্জা নির্দেশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সমূহের বিন্যাস ব্যবস্থা। Politics গ্রন্থের ১ম পুস্তকের ১ম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সংস্থা মাত্রই লক্ষ সেখানে কোন উত্তম সাধন করা, সেখানে সে সংস্থা সকল সংস্থার সেরা এবং অপর সকল সংস্থা সে সংস্থার অন্তর্গত, সে সংস্থার লক্ষ হচ্ছে চরম উত্তমের সাধন এবং এরুপ সংস্থাকে আমরা রাষ্ট্র বলে অভিহিত করি। তার মতে সংবিধানের পরিবর্তন রাষ্ট্রের পরিবর্তন সূচিত করে। সংবিধান ও রাষ্ট্রের এই অভিন্নতা পক্ষান্তরে রাষ্ট্র ও দলের অভিন্নতার নামান্তর। কারন নতুন দল ক্ষমতায় এসে যদি সংবিধানের মধ্যে পরিবর্তন করে তাহলে রাষ্ট্রের মধ্যে পরিবর্তন হয়।
কিন্ত রাষ্ট্র ও দলের অভিন্নতা বর্তমানে সমর্থন করা যায় না। কারন দল চাইলেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। বর্তমানে কল্যানমূলক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য সকল দল ও গোষ্ঠীর সমর্থন আবশ্যক। সংবিধান পরিবর্তনে বিরোধী দল অবশ্যই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এরিষ্টটল প্রথমত দুইটি মূলনীতি অনুসারে সংবিধানকে ভাগ করেছেন-
- ১ম টি, সংবিধানের লক্ষ ও উদ্দেশ্যে অনুসারে এবং
- ২য় টি, শাসকের সংখ্যা অনুসারে।
লক্ষ ও উদ্দেশ্যের পার্থ্যক্য অনুসারে সংবিধান দুই প্রকারঃ
- ১ম টি, শুদ্ধ
- ২য় টি, বিকৃত
উভয় প্রকার সংবিধানে সার্বভৌম ক্ষমতা যাদের উপর ন্যাস্ত থাকে তাদের সংখ্যা অনুসারে সংবিধানকে আবার তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছেন। যথা-
- ১ম টি, একের শাসন
- ২য় টি, কতিপয়ের শাসন
- ৩য় টি, নাগরিক সাধারনের শাসন।
ফলতঃ এরিষ্টটল সংবিধানের যে শ্রেনী বিভাগ করেছেন তার মোট সংখ্যা মূলত দাড়াচ্ছে ছয় প্রকার। নিচে এগুলো টেবিল আকারে দেয়া হল-
শাসকের সংখ্যা | শুদ্ধ | বিকৃত |
একজনের শাসন | রাজতন্ত্র | স্বৈরতন্ত্র |
কতিপয়ের শাসন | অভিজাততন্ত্র | ধনিকতন্ত্র |
নাগরিক সাধারনের শাসন | পলিটি | গণতন্ত্র |
বাস্তব দৃষ্টিকোন থেকে সর্বপ্রকার সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষন করে তিনি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রচলিত সংবিধানের মধ্যে ‘পলিটি’ সর্বোত্তম।পলিটি কোন বিচ্যুত ব্যবস্থা নয়। পলিটি হচ্ছে ধনিকতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের একটি মিশ্রিত রুপ। পলিটি হচ্ছে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে সংবিধানের স্থায়িত্ব বিদ্যমান, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গ্রহণযোগ্যতা বিরাজমান, রয়েছে শাসক শাসিতের মধ্যে সন্দেহ অধিকারের অনুপস্থিতি এবং সংখ্যা ও গুণের ভারসাম্য।
কিন্ত বর্তমান কালে দেখা যায় যে, রাষ্ট্র সমূহে গণতন্ত্র সর্বোত্তম। কারন জনগনের শাসন দ্বারা শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিষ্টটল Politics গ্রন্থের সপ্তম ও অষ্টম পুস্তকে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথম পর্যায়ে প্লেটোর মতই দ্বান্দিক বিশ্লেষনের পদ্ধতিতে আদর্শ রাষ্ট্রের অনুসন্ধানে ব্রতী হন, কিন্ত গণতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রের পরস্পর বিরোধী দাবির পর্যালোচনা থেকে তিনি যখন উপলব্দি করেন যে, এ ধরনের আদর্শ রাষ্ট্রের অনুসন্ধানের একটি অবাস্তব প্রয়াস, তখন তিনি তা পরিত্যাগ করেন এবং বাস্তবে সম্ভবপর সরকার সমূহের মধ্যে যেটি সর্বোত্তম সেটির সমস্যা নিয়ে তিনি আলোচনা শুরু করেন। এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, মানুষের সৎ জীবন নিশ্চিত করাই আদর্ষ রাষ্ট্রের লক্ষ এবং এই লক্ষ অর্জনের জন্য শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারে কতগুলো শর্ত পালিত হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে লক্ষনীয় যে, এরিষ্টটল আদর্শ রাষ্ট্রের আলোচনায় সরকারের কোন উল্লেখ করেন নি। কিন্ত বাস্তবে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি সরকারের কথা উল্লেখ করেন। আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, তা অবশ্যই আদর্শগত সদগুন দ্বারা শাসিত হবে এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরাই শাসন পরিচালনা করবেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, শাসক যদি সদগুনের অধিকারী হয় তাহলে সে গণতন্ত্র হবে রাজনৈতিক অন্যথায় তা হবে অভিজাত তান্ত্রিক।
এরিষ্টটল তার সর্বোত্তম রাষ্ট্রের চারিত্রিক অখন্ডতা রক্ষাকল্পে কতিপয় বস্তুগত ও সামাজিক শর্ত আরোপ করেছেন।
প্রথমত, এই রাষ্ট্রের অধিবাসীর সংখ্যা এরুপ হতে হবে যাতে তা আইন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার সৃষ্টি না করে স্বয়ংসম্পূর্নতার প্রয়োজন মিটাতে পারে।
এছাড়া, এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থের ৭ম অধ্যায়ে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের আয়তন হবে মাঝারি ধরনের- না খুব বড়, না খুব ছোট। ভূখন্ডের আয়তন এমন হতে হবে যাতে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে রাষ্ট্র হবে সমূদ্রকূল সংলগ্ন। তথাপি সামরিক নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতি এই উভয় দিক থেকে নগরীর সাথে সমূদ্রের যোগাযোগ কাম্য। সর্বোত্তম রাষ্ট্রে নাগরিকদের বৈশিষ্ট্য হবে মিশ্র প্রকৃতির। আদর্শ রাষ্ট্রে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে আইনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আইনের শাসনের মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ উন্নয়ন সম্ভব। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, রজনৈতিক কর্মতৎপরতার অনুকূল পরিবেশ এবং ব্যাপক সৌন্দর্যবোধ বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখার কথা বলেন। রাষ্ট্রে বিবাহ ব্যবস্থা সরকারী মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তিনি বলেন।
Politics এর প্রথম পুস্তকে এরিষ্টটল বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে আলোচনা করার পর কিভাবে তা এড়ানো যায় তার একটি পন্থা নির্দেশ করেছেন। বিপ্লব শব্দটি তিনি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তার ফলে যেকোন রকমের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিপ্লবের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গণতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, অভিজাততন্ত্রের যেকোন পরিবর্তন, সংবিধানের যেকোন সংশোধন- এককথায় সরকার বা সংবিধানের যেকোন পরিবর্তনকে তিনি বিপ্লবের আওতাভুক্ত করেছেন। এরিষ্টটল বিপ্লবের বর্ণনা করতে গিয়ে গ্রীক স্টাটিস শব্দটি ব্যবহার করেছেন। স্টাটিস শব্দটির সঠিক ভাষান্তর বিপ্লব নয়। “স্টাটিস বলতে এমন একটি অস্তির অবস্থাকে বুঝানো হয়, যে অস্থির অবস্থাতে হিংসাত্বক বিস্ফোরন অবশ্যম্ভাবি হয়ে উঠে”। (৫ম পুস্তক, প্রথম অধ্যায়)। সুতরাং স্টাটিস শব্দের অর্থ বিপ্লব না হয়ে আস্থিরতা বা পরিবর্তনশীলতা হতে পারে। বিপ্লবের উদ্ভব ও শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন কিভাবে এক্ষেত্রে এরিষ্টটল কতগুলো কারন উল্লেখ করেছেন।
কারণ সমূহ হলঃ
সাধারন কারণকে আবার তিনি তিনভাগে ভাগ করেছেনঃ
- মনস্তাত্বিক উদ্দেশ্য;
- মুনাফা ও সম্মান লাভের বাসনা;
- প্রাথমিক অবস্থান সমূহ।
মনস্তাত্বিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন, যারা সমতার জন্য উদগ্রীব তারা যদি বিশ্বাস করে যে, তারা যদি অধিকতর যারা পাচ্ছে তাদের সমান তথাপি তারা কম পাচ্ছে তবে তারা বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সমাজে কোন অংশ যদি মনে করে যে, তাদের প্রতি ন্যয়বিচার করা হচ্ছে না তখনি তারা বিপ্লবী হয়ে উঠে।
ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তারা যখন অত্যাচারী হয়ে উঠে এবং যখন তারা নিজেরা মুনাফা অর্জন করতে থাকে তখন যেমন পরস্পরের বিরোদ্ধে আঘাত করে। বর্তমান যে শাসন ব্যবস্থা তাদের ক্ষমতার উৎসের বিরুদ্ধেও আঘাত আনে।
বিপ্লবের বিশেষ কারণের মধ্যে রয়েছেঃ-
- ধনিকতন্ত্রে বিপ্লব সংঘটিত হয় মূলত জনতার প্রতি অন্যায় ও অত্যাচারমূলক আচরন করার ফলে এবং কিছুটা ধনিদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে।
- পলিটির মধ্যে গণতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রীদের যে সমন্বয় সাধিত হয় তার ত্রুটিপূর্ণ ভারসাম্যের ফলে পলিটির মধ্যে বিপ্লবের সূচনা হয়।
- বর্ণগত, জাতিগত বিরোধ থেকেও বিপ্লব ঘটতে পারে। তাছাড়া ক্ষমতা যখন এক বা একাধিক ব্যক্তির হাতে অধিকমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হয়, তখন বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে।
- অনেক সময় ভোটাধিকার বিন্যাসের সময় বিপ্লবের উদ্ভব হয়।
বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থায় বিপ্লব সংঘটিত হয়, যেমনঃ গণতন্ত্রে বিপ্লবের অন্যতম কারণ হচ্ছে জননেতাদের চরিত্রহীনতা। আর কতিপয়তন্ত্রে প্রতি বিরোধীতাই হচ্ছে কতিপয়তন্ত্রে জন্য সবচেয়ে বড় কারণ। কতিপয়তন্ত্রে বিপ্লবের আরেকটি কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব।
অভিজাততন্ত্রে বিপ্লবের প্রধান কারন হচ্ছে এখানে যোগ্যতর লোকের সংখ্যা কম।
রাজতন্ত্রে বিপ্লব দেখা যায়- প্রথমত, রাজপরিবারের অভ্যন্তরীন বিরোধের ফলে, দ্বিতীয়ত, রাজা যখন রাজ্যের প্রথাগত ঐতিহ্য ও নিয়মের ব্যতিক্রম করে সেচ্ছাচারী হয়ে উঠে তখন জনগন বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
এরিষ্টটল ৫ম পুস্তকের ৮ম অধ্যায়ে শাসন ব্যবস্থা সংরক্ষন তথা বিপ্লব প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
- শাসন ব্যবস্থায় যারা অংশগ্রহণ করে তাদের এবং নিজেদের মধ্যে আচরনের মধ্যে তারা গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
- আইনহীনতা ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- গণতন্ত্রে ধনিকদের প্রতি সুবিবেচনা প্রদর্শন করতে হবে।
- কতিপয়তন্ত্রে যারা স্বচ্ছল নয় তাদের স্বচ্ছলতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
- ধনিকতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের মধ্যে গণতন্ত্রে মেজাজ রক্ষা করতে হবে এবং কিছু কিছু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে- শ্রেনীগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ লাভের ব্যাপারে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
এরিষ্টটল বিপ্লবের কারণ বিশ্লেষন ও তার নিবারনের পন্থা নির্দেশ করতে গিয়ে যেসব মতামত ব্যক্ত করেছেন সেগুলো যদিও তৎকালীন গ্রীক নগররাষ্ট্র গুলোর অবস্থার প্রেক্ষিতে করা হয়েছে তথাপি এর উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে। আধুনিক কালে যে কয়টি বৃহৎ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর পিছনে এরিষ্টটল প্রদর্শিত মনস্তত্ব সম্পূর্নরুপে বিরাজমান। যখন দেশের অধিকাংশ লোকের মনে যখন বঞ্চনার মনোভাব তীব্র আকার ধারন করে তখন তারা বিপ্লবের মাধ্যমে তার অবসান ঘটাতে প্রয়াস পায়। উদাহরনসরুপ যে রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে তার মধ্যেও আমরা বহু মূর্ত অভিব্যক্তি প্রত্যক্ষ করেছি। শুধু বিপ্লবের কারণ বিশ্লেষনই নয় বিপ্লব এড়ানোর জন্য যেসব পন্থা নির্দেশ করেছেন সেগুলো আধুনিক বিপ্লব নিবারনের পন্থা হিসেবে সম্পূর্ন প্রযোজ্য।
এরিষ্টটলের চিন্তাধারায় দাসপ্রথা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে। শুধু আইন গত দিক থেকেই নয়, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দাসপ্রথাকে একটি ন্যায়সঙ্গত প্রথা বলে ঘোষণা করেছেন। দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি এবং এই নীতি হচ্ছে আদেশ ও আনুগত্যের সমন্বয়। এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থের প্রথম পুস্তকের ৫ম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে দাসত্ব প্রাকৃতিক। প্রকৃতির সর্বত্রই শাসক এবং শাসিতের সম্পর্ক বিদ্যমান। মানুষের মধ্যে এমন মানুষ আছে যাদের যুক্তির বোধ নাই, কিন্ত যুক্তি অনুধাবনের ক্ষমতা আছে। এরাই হচ্ছে প্রাকৃতিক দাস। এরিষ্টটলের মতে কিছু লোক প্রঞ্জার অধিকারী এবং এই প্রঞ্জার বলে তারা শুধু আদেশ প্রদানে সক্ষম আর কিছু লোক দৈহিক বলের কারণে কায়িক পরিশ্রমে সক্ষম। প্রথম শ্রেনীর লোকেরা হচ্ছে প্রভু, দ্বিতীয় শ্রেনীর লোকেরা হচ্ছে দাস। অতএব, প্রভু এবং দাসের যে সম্পর্ক তা হচ্ছে আদেশ প্রদান ও আদেশ মান্য করার সম্পর্ক। এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, প্রভু ও দাস উভয় শ্রেনীর লোকের কল্যানার্থে দাস প্রথা যুক্তিসঙ্গত। প্রভুর দিক থেকে দাস প্রথা কল্যানকর বহু কারণে যে উন্নত মানের নৈতিক জীবন গঠন করার উদ্দেশ্যে প্রভুদের জন্য দৈহিক পরিশ্রম থেকে যে বিমুক্তির প্রয়োজন তা একমাত্র দাসেরাই প্রদান করতে সক্ষম। আর দাসের দিক থেকে তা কল্যানকর এই কারণে যে প্রভুদের জন্য দাস বৃত্তি করে পরোক্ষভাবে তাদের গুণাবলির দ্বারা উপকৃত হয়। সুতরাং দাস প্রথা প্রভু ও দাসের পারস্পরিক কল্যান নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এরিষ্টটল দাস প্রথাকে দুটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রথমত, দাস প্রথা নাগরিক সংঞ্জারই অবশ্যম্ভাবি পরিণতি। পূণ্যশীল জীবন গঠন করাই নাগরিকের প্রধান দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পরিপূর্ন ভাবে পালন করতে হলে থাকে দৈহিক পরিশ্রম থেকে বিমুক্তির প্রয়োজন যা দাস প্রথার মাধ্যমে সম্ভব। দ্বিতীয়ত, দাসরা হল প্রভুর জীবন্ত সম্পদ ও কর্ম সম্পাদনের উপাদান। এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থে প্রভু ও দাসের যে সম্পর্কের কথা বলেছেন তা হলঃ স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক, পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক, প্রভুর সাথে দাসের সম্পর্ক।
এরিষ্টটল দাস প্রথাকে শুধু যে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছেন তাই নয়, তিনি এই প্রথার নৈতিক যথার্থতা প্রমানের চেষ্টা করেছেন। কিন্ত তার এই মতাবাদ মানবজীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত নীতিরই ফলশ্রুতি। তার দাস প্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে এই প্রথা একটি মানবতা বিরোধী প্রথা। শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়ে অন্যের উপর প্রভুত্ব করা অন্যায়, অমানবিক এবং অযৌক্তিক। যারা কায়িক পরিশ্রম করতে পারে তার প্রঞ্জার অধিকারী নয়, শুধুই শারিরীক বলে বলীয়ান- এরূপ একতরফা মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সময়ে দেখা যায় যে নিকৃষ্ট শ্রেনীর একটি লোক তার মেধা ও প্রতিভা বলে সমাজ ও রাষ্ট্রের শীর্ষে উপনীত হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক যুগে যেখানে সার্বজনীন মানবতার নীতি স্বীকৃত, সেখানে এরিষ্টটলের দাসপ্রথাকে কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গণতন্ত্র ও সাম্যের নীতির বিপরীত অবস্থাই হচ্ছে এই দাস প্রথা।
এরিষ্টটল তার Politcs এর তৃতীয় পুস্তকে নাগরিকের যে সংঞ্জা নির্দেশ করেছেন তাতে বাসস্থানের বৈধ অধিকার ভোগ কিংবা জমিগত অধিকার কোনটি নাগরিকতার যথার্থ সংঞ্জা নির্দেশক নয়। এরিষ্টটল বলেছেন আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলে অভিহিত করব যাদের উক্ত রাষ্ট্রের আইন প্রনোয়ন মূলক বা বিচার বিশ্লেষন কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে এবং সাধারন ভাবে বলতে গেলে রাষ্ট্র সেইসব নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি সংসার যা জীবনের লক্ষ অর্জনের জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া তিনি Politics এর তৃতীয় পুস্তকের ১ম, ২য়, ৪র্থ এবং ৫ম অধ্যায়ে নাগরিক ও নাগরিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এরিষ্টটলের দেয়া তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কার্যে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করে তারাই নাগরিক। তিনি সুস্পষ্টভাবে দাস, শ্রমজীবী, নারী, কারিগর এবং বিদেশীদের নাগরিক নন বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন- ‘দাসগন’ তারা রাষ্ট্রে বসবাস করে কিন্ত দাসরা নাগরিক নয়।
শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করা এবং শাসন মান্য করার যোগ্যতা উত্তম নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এরিষ্টটল শ্রমিকদের নাগরিকতার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেননি। কিন্ত বর্তমান যুগে দেখা যায় ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ সবারই নাগরিক অধিকার ভোগের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে তার যুক্তি অবাস্তব। এরিষ্টটলের নাগরিকতার ধারনা একটি রক্ষণশীল ও অভিজাততান্ত্রিক ধারনা ছিল। তিনি নাগরিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে শ্রেনী বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। যেমন- নাগরিক শ্রেনী এবং অনাগরিক শ্রেনী। কিন্ত তার বিভক্তির নীতি গুলো সম্পুর্নভাবে অসমতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
এরিষ্টটল তার আদর্শ রাষ্ট্রের আলোচনায় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমন্ডলিকে গুরুত্ত্ব দেয়ার পরিবর্তে আইনের উপর বেশ গুরুত্ত্বারোপ করেছেন। Politics গ্রন্থের ৪র্থ পুস্তকের ৩য় অধ্যায়ে বলা আছে আইন যেখানে শাসন করে না সেখানে কোন শাসন ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সরকারি শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় তিনি নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
এরিষ্টটল তার ‘The Politics” গ্রন্থের মধ্যে সম্পত্তির সংঞ্জা, প্রকৃতি, সম্পত্তি আহরনের কৌশল এবং সম্পত্তি উচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন সম্পদ হচ্ছে পরিবার বা রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহারের নিমিত্ত গচ্ছিত কতগুলো অস্ত্র বা অস্ত্রের ভান্ডার। এই অস্ত্র বা যন্ত্র সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে সম্পত্তি ব্যতিত মানুষের পক্ষে জীবন ধার করা সম্ভব নয়। তাই জীবন ধারনের জন্য সম্পত্তি আহরনের প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত। তার মতে যেহেতু সম্পত্তি একটি অস্ত্র এবং তার প্রধান লক্ষ হচ্ছে পরিবের বা রাষ্ট্রের মধ্যে সৎ বা নৈতিক জীবন গঠনে সাহায্য করা। অতএব, কী পরিমান সম্পত্তি আহরন করা হবে তার একটি নির্দেশ সীমা থাকবে। যখন এই সীমা অতিক্রম করা হবে তখন তা অস্বাভাবিক সম্পদ আহরনে পরিনত হবে। এব্যাপারে তিনি যে পন্থা অবলম্বন করেন তা মধ্যম পন্থা।
এরিষ্টটল Politics এর প্রথম পুস্তকে পরিবার সম্পর্কে বিষদভাবে আলোচনা করেছেন। তার মতে পরিবার মানুষের জৈবিক, অর্থনৈতিক প্রয়োজনের সার্বিক ফলশ্রুতি। যৌনক্ষুধা, আত্মসংরক্ষন ও আত্মপ্রবৃদ্ধি মানুষেকে পরিবার গঠনের পথে পরিচালিত করে। শুধু জৈবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবারের কাজ সীমাবদ্ধ নয়। পরিবার মানুষের প্রেম, প্রীতি, স্নেহ-ভালবাসা প্রবৃত্তি মানুষের নানাবিধ গুণাবলিরও একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান।
এরিষ্টটল অবসর বলতে যা বুঝিয়েছেন তা অবসর সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার সম্পুর্ন বিপরীত। তার মতে যে পরিবেশে নাগরিকেরা সাংসারিক জীবনের ঝক্কি ঝামেলা দ্বারা বিভ্রত না হয়ে একাগ্রচিত্তে রাষ্ট্রীয় কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন এবং উন্নতমানের নৈতিক জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হন। একেই তিনি অবসর বুঝিয়েছেন। এর অর্থ অবশ্যই এই নয় যে তাদের সাংসারিক জীবন বলতে কিছু থাকবে না। তাদের এই সংসার জীবনের যেকোন ঝামেলা দাসেরা বহন করবে এবং তাকে নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সাধনায় সহযোগিতা করবে। এই ক্ষেত্রে অবসরের দুটি অর্থ বিদ্যমান। একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। নেতিবাচক হল দৈহিক শ্রম বা সাংসারিক ঝামেলা থেকে বিমুক্তি আর ইতিবাচক হল ঞ্জান অনুশীলন, কাব্যরচনা, নৃত্য এবং সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ক।
এরিষ্টটলকে সাধারনত জনগনের সার্বভৌমত্বের প্রাচীনতম প্রবক্তা বলে গণ্য করা হয়। তিনি অত্যন্ত্য দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, একজন কিংবা কতিপয়ের সদগুনই যতই বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন তা পরিমানগত বা গুণগত কোন দিক দিয়ে সম্মিলিতভাবেই সকলের সদগুণের সমান হতে পারে না। অতএব, একজন বা কতিপয় সঙ্ঘত ভাবেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারনের ব্যাপারে একচ্ছত্র অধিকারের দাবিদার হতে পারে না। এরূপ দাবি যদি কেউ করতে পারে তবে তা পারে একমাত্র রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সম্মিলিত ভাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, কনগনের সার্বভৌমত্বে সপক্ষে মত প্রকাশ করলেও তিনি আইনের সার্বভৌমত্ব নীতিরই সমর্থক। গণসার্বভৌমত্বের নীতি বলতে এরিষ্টটল যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হল এই যে একমাত্র জনসাধারন তাদের সম্মিলিত প্রঞ্জার বলে শাসকদের শাসনের গুণাগুন সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরন দিয়েছেন যে, “যারা খানা খায় বা সঙ্গীত শ্রবন করে, খানা ও সঙ্গীতের গুণাগূন সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই দিতে পারে। কিন্ত তার অর্থ এই নয় যে, তারা নিজেরা ভাল রান্না করতে পারে বা ভাল গান গাইতে পারে।
‘The Politics’ গ্রন্থে এরিষ্টটল বলেন যে নীতির ভিত্তিতে জনগনের মঘ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও অন্যান্য সুবিধা বন্টিত হয় সে নীতিই বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যের কারন হিসেবে কাজ করে। আর এটাই আনুপাতিক ন্যায়বিচারের নীতি। আনুপাতিক ন্যায়বিচার নীতির নির্গলিত অর্থ হল, রাষ্ট্রের কল্যান সাধনে বা সৎ জীবন গঠনের ক্ষেত্রে যাদের অবদান বেশি অর্থাৎ যারা অধিক পরিমানে পৌর গুণের অধিকারী তারা অন্যান্য ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম গুণসম্পন্ন হলেও এক্ষেত্রে অধিক পরিমানে রাষ্টীয় ক্ষমতা ও সুবিধা লাভের অধিকারে।
এরিষ্টটল ৮ম পুস্তকের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম অধ্যায়ে সঙ্গীত সম্পর্কে আলোচনা করেন। সঙ্গীতকে চরিত্রের উপর প্রভাব বহনকারী উত্তমের উদ্দীপক হিসেবে মনে করা হয়। সঙ্গীতের নিশ্চয়ি বুদ্ধি ও সংস্কৃতি সম্পন্ন অবসর বিনোদনে একটি অবদান আছে। সঙ্গীত হচ্ছে সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং সুন্দর বিষয়ের অন্তর্গত। সঙ্গীতে ছন্দ ও সুরের ক্ষেত্রে বাস্তবের একটি ঘনিষ্ট সাদৃশ্য দেখা দেয়। এ বাস্তব হচ্ছে ভদ্রতা ও অভদ্রতা, সাহস ও সংযম এবং সকল গুণের বিপরীত তথা সকল নৈতিকজনের বাস্তবতা। সঙ্গীতের শিক্ষা এমন হবে না যাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের কার্যক্রমের উপর বিকৃত প্রভাব বিস্তার করে।
পলিটি ব্যবস্থাকে তিনি অবস্থার ভিত্তিতে উত্তম বলে চিহ্নিত করেছেন। পলিটি কোন বিচ্যুত ব্যবস্থা নয়। পলিটি হচ্ছে ধনিকতন্ত্র ওবং গণতন্ত্রের আরেকটি মিশ্রিত রুপ। পলিটি হচ্ছে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে সংবিধানের স্থায়িত্ব বিদ্যমান, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গ্রহণযোগ্যতা বিরাজমান, রয়েছে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সন্দেহ থাকিবার অনুপস্থিতি এবং সংখ্যা ও গুণের ভারসাম্য।
এরিষ্টটল তার “The Politics” গ্রন্থের জন্য দেশে বিদেশে নানা ভাবে সমালোচিত হয়েছেন। যদিও তার অবদান অনস্বীকার্য তথাপি তার তথ্যে যথেষ্ট ত্রুটি লক্ষ করা যায়। প্রথমত তার পুস্তক বিন্যাস এলোমেলো ভাবে সাজানো যা পাঠক সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তিনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র গ্রীসের লোকেরাই সদগুণের অধিকারী। আর করো মধ্যে এই সদগুণই থাকতে পারে না। এই কারনে তিনি বিশ্বের সকল অগ্রীসীয় লোককে অসভ্য বলে অভিহিত করেছেন। যা তার সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। দাসপ্রথা সক্রান্ত এরিষ্টটলের মতবাদ গণতান্ত্রিক সমাজে অচল। প্রকৃতি কাউকে দাস আর কাউকে প্রভু করে সৃষ্টি করেনি। এরিষ্টটল শুধু দাসদের বিরোধিতা করেছেন এমন নয়, তিনি দাস ও প্রভুর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তিনি জোরপূর্বক কাউকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি তার বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রে মধ্যবিত্তের শাসনের কথা বলেন কিন্ত বিশ্বের কোথাও মধ্যবিত্তের শাসন লক্ষ করা যায় না। তাই তা সমালোচিত। এরিষ্টটল সরকারের শ্রেনীবিভাগের ক্ষেত্রে সংবিধান ও সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি। কিন্ত বর্তমানে সরকার ও সংবিধান দুটি আলাদা বিষয়। তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে পলিটির কথা বলেছেন তা বাস্তবায়ন যোগ্য নায়। পলিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি মিশ্র প্রকৃতির। তাছাড়া তিনি গণতন্ত্রকে নিকৃষ্ট শাসন বলে আখ্যায়িত করেন কিন্ত সারা বিষ্বেই আজ গণতন্ত্রই সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি শ্রমজীবি মানুষদের নাগরিকতার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন নি যা বর্তমান সমাজ বিকাশে অচল। এছাড়া তিনি করারোপ, সরকারী ঋণ, স্থায়ী সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী, আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করেন।
মোট কথা হল এই যে, তিনি একজন বাস্তব বাদী দার্শনিক। তাঁর Politics গ্রন্থে এমন অনেক মূল্যবান উপাদান দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো কালোত্তির্ন ঐতিহ্যের মর্যাদা দান করেছে এবং মধ্যযুগ ও বর্তমান যুগের বহু মনীষির চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
আজ আর না। অন্যকোন দিন অন্যকোন হারিয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।