Saturday, June 20, 2015


Image result for Mark Zuckerberg
Mark Zuckerberg,ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং CEO।
জন্ম:১৪ই মে,১৯৮৪
জন্মস্থান-Dobbs Ferry,New York
স্কুল জীবন-Philips exeter academy,Ardsley high school
কলেজ-Harvard university
ছোট্টসময় থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুকারবার্গের।স্কুলে পড়ার সময় বানিয়েছিলেন তার বাবার কাজের জুকারবার্গ নেট নামের একটি সফটওয়্যার।
কলেজে পড়ার সময় হার্ভাড ভার্সিটির ছাত্রদের জন্য তৈরি করেন ফেসবুক।ফেসবুক ডেভেলপ করার সময় মার্ক--
মার্ক ভাইয়ের আরও কিছু ছবি--

মার্ক ভাইয়ের গ্রিল বানানোর মেশিন এবং পোষা কুকুর-
দেখেন কুকুরটা মার্ক ভাইয়ের কত্ত প্রিয়।
ওবামার সাথে কিছুদিন আগে ডিনার করেছিল মার্ক ভাই।তার ছবি।
বলেন তো এই মেয়েটা কে??
আরে আসল কথা তো বলতেই ভুলে গেছি।মার্ক ভাই গতকাল ১৯ মে বিয়ে করেছেন।বউয়ের নাম প্রিসিলা চ্যান।কংগ্রাচুলেশন টু মার্ক ভাই।চ্যান এবং মার্ক ভাইয়ের বিয়ের সময়ের
ছবি।
মার্ক জুকারবার্গ,প্রিসিলা চ্যান এবং মার্ক ভাইয়ের কুকুরটা

মার্ক ভাইয়ের বউ চাইনিজ।শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে কথা বলার জন্য তিনি চাইনিজ ভাষাও শিখে ফেলছেন।তার ফেবু স্ট্যাটাস-
In 2010, my personal challenge was to learn Mandarin. I have always been interested in Chinese culture and learning a language is a great way to learn about a culture. Learning a language is also a good intellectual challenge and Mandarin is a particularly difficult language for English-speakers. I have had a hard time learning languages in the past, so this seemed like a particularly good challenge. Finally, some members of my girlfriend's family only speak Chinese and I wanted to be able to talk to them.
মার্ক জুকারবার্গ প্রায় নিরামিষভোজী।তার একটি ফেবু স্ট্যাটাস-
My 2011 challenge is to become a vegetarian and only eat meat if I kill the animal myself. The reason for this is that I feel lucky for having such a great life. I like eating meat and before this year I ate it almost every day. In order to practice thankfulness, I want to be more connected to the food I eat and the animals that give their lives so I can eat them.
জুকারবার্গের ফেসবুক আইডিতে গেলে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।তার ফেসবুক আইডির লিঙ্ক-
http://www.facebook.com/zuck
প্রিসিলা চ্যান এর ফেসবুক আইডি-http://www.facebook.com/priscilla

প্রিসিলা চ্যানকে মেসেজ পাঠানো যায়।আপনারা  চ্যানকে উইস করতে পারেন।আমি করলাম-


বিজ্ঞাপনের জন্য বরাদ্দ স্থান বিজ্ঞাপন বুকিং এর জন্য এখনই ফোন করুন ০১৭১৯২০২০১৯ নম্বরে

Image result for Fathers of Homoeopathy১৭৫৫ সাল এপ্রিলের মধ্যরাতে জার্মানের মিসেন শহরে দরিদ্র পরিবারে জন্মায় এক শিশু। তখনও কেউ কল্পনা করতে পারেনি এই শিশুই একদিন হয়ে উঠবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান জগতে এক নতুন ধারার জন্মদাতা।



শিশুটির নাম দেওয়া হয় ক্রিশ্চিয়ান ফ্রেড্রিক স্যামুয়েল হানিম্যান ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্মদাতা বলা হয় হানিম্যানকে। হানিম্যান ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয়। পিতামাতার প্রথম পুত্র সন্তান। বাবা গডফ্রিড ছিলেন চিত্রকর। তাই বাবার আশা ছিল হানিম্যান বড় হয়ে উঠলে তারই সাথে ছবি আঁকার কাজ করবে।
বাবাকে সহযোগিতা করে পরিবারের দরিদ্র অবস্থার উন্নতি করবে। কিন্তু হানিম্যান-এর আগ্রহ পড়াশোনায়। সে স্কুলে যেতে চায়। বারো বছর বয়সে হানিম্যান ভর্তি হলেন স্থানীয় টাউন স্কুলে। অল্পদিনের মধ্যেই তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ তার স্কুলের শিক্ষকরা।
টাউন স্কুলে শিক্ষা শেষ করে হানিম্যান ভর্তি হলেন প্রিন্সেস স্কুলে।
এদিকে সংসারে অভাব ক্রমশ বেড়েই চলছে। বাবা গডফ্রিডের পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। নিরুপায় হয়ে ছেলে হানিম্যানকেও কাজে লাগিয়ে দিতে হলো। একটি মুদি দোকানে হানিম্যান কাজ শুরু করলেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় খুবই হতাশ হলেন।
মেধাবী হানিম্যানের পড়া বন্ধ হোক এটা তারা চাচ্ছিলেন না। তাই তার পড়াশোনার সব খরচ স্কুল কর্তৃপক্ষ মওকুফ করে দিল। শুরু হয় আবার পড়াশোনা। যথাসময়ে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন হানিম্যান ।

পিতার অমতেই লিপজিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য বেরিয়ে পড়েন। হানিম্যানের ইচ্ছে ছিল চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করবেন। তখন কোন ডাক্তারের অধীনে থেকে কাজ শিখতে হত। লিপজিকে কোন ভালো হাসপাতাল ছিল না। তিনি ভিয়েনাতে ডাক্তার ফন কোয়ারিনের কাছে কাজ করার সুযোগ পেলেন। তখন তার বয়স মাত্র বাইশ বছর।

এরই মধ্যে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ইংরেজি, ইতালিয়ান, হিব্রু, আরবি, স্প্যানিশ এবং জার্মান ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এবার ভাষাতত্ত্ব ছেড়ে শুরু হলো চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন। হাতে কিছু অর্থ সঞ্চয় হতেই তিনি ভর্তি হলেন আরলাংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকেই ২৪ বছর বয়সে ‘ডক্টর অব মেডিসিন’ উপাধি অর্জন করেন।

ডাক্তারি পাশ করে এক বছর প্র্যাকটিস করার পর তিনি জার্মানির এক হাসপাতালে চাকরি পেলেন। কিন্তু হানিমানের আগ্রহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে। চিকিৎসা নিয়েই তিনি পড়ে নেই। হুট করেই তিনি বিভিন্ন বই অনুবাদ করা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি অনুবাদক হয়ে উঠলেন।
একবার এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাক্তার কালেনের একটি বই অ্যালোপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা বইটি ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ শুরু করেন। সেখানে একটি অধ্যায়ে দেখতে পেলেন ম্যালেরিয়া জ্বরের ঔষধ কুইনাইন যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীরে প্রয়োগ করা যায় তবে অল্পদিনের মধ্যেই তার শরীরে ম্যালেরিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাবে।

কালেনের বই থেকে পাওয়া এই বক্তব্যটি হানিম্যানের চিন্তার জগতে নাড়া দিল। তিনি পরীক্ষা শুরু করলেন। প্রতিদিন ৪ ড্রাম করে দুবার সিঙ্কোনার(চায়না) রস খেতে থাকলেন। তিন চারদিন পর লক্ষ্য করলেন সত্যিই সত্যিই তিনি ম্যালিরিয়াতে আক্রান্ত হলেন। এরপর পরিবারের প্রত্যেকের উপর এই পরীক্ষা করলেন। প্রতিবারই একই ফলাফল পেলেন। এরপর থেকে মনে প্রশ্ন জাগলো।
এতদিন চিকিৎসকদের ধারণা ছিল মানুষের দেহে অসুস্থ অবস্থায় যে সব লক্ষণ প্রকাশ পায় তার বিপরীত ক্রিয়াশক্তি সম্পন্ন ঔষধেই রোগ আরোগ্য হয়। এই প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে শুরু হল তার গবেষণা।

গোটার ডিউক মানসিক রোগের চিকিৎসালয় খোলার জন্য তার বাগানবাড়িটি হানিম্যানকে ছেড়ে দিলেন। ১৭৯৩ সালে হানিম্যান এখানে হাসপাতাল গড়ে তুললেন। এবং একাধিক মানসিক
রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। দীর্ঘ ছয় বছরের অক্লান্ত গবেষণার পর তিনি সিদ্ধান্তে এলেন যথার্থই সদৃশকে সদৃশ আরোগ্য করে।

তার এই আবিষ্কার ১৭৯৬ সালে সে যুগের একটি বিখ্যাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটির নাম দেওয়া হলো ( An essay on a new Principle for Ascertaining the curative Powers of Drugs and some Examination of the previous principle.) এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আধুনিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ভিত্তি পত্তন করলেন হানিম্যান- সেই কারণে ১৭৯৬ সালকে বলা হয় হোমিওপ্যাথির জন্মবর্ষ।

হোমিওপ্যাথি শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিকশব্দ 'হোমোস' এবং 'প্যাথোস' থেকে। হানিম্যানের এই যুগান্তকারী প্রবন্ধ প্রকাশের সাথে সাথে চিকিৎসা জগতে প্রায় সবাই এই মতের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে গেল।
তার বিরুদ্ধে পত্র পত্রিকায় তীব্র সমালোচনামূলক লেখা শুরু হলো। তাকে 'হাতুড়ে চিকিৎসক' উপাধি দেওয়া হলো।
নিজের আবিষ্কৃত সত্যের প্রতি তার এতখানি অবিচল আস্থা ছিল, কোনো সমালোচনাতেই তিনি সামান্যতম বিচলিত হলেন না। তার পড়াশোনা আরও বাড়তে থাকে। গবেষণাও চলতে থাকে।

পরে ১৮০৫ সালে ল্যাটিন ভাষায় প্রকাশ করলেন ২৭টি ঔষধের বিবরণ সংক্রান্ত বই। এই বইটি প্রথম হোমিওপ্যাথিক মেটিরিয়া মেডিকা বা ভেষজ লক্ষণ সংগ্রহ। এরপর থেকেই তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আরম্ভ করেন।

লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক হানিম্যানের চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক করতে চাইলেন। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশ এতে বাধা দিল। কিন্তু তাদের বাধা সত্ত্বেও হানিম্যান সুযোগ পেলেন। এবং একটি বক্তৃতা দিলেন। তার বক্তৃতা শুনে দলে দলে শিক্ষার্থীরা তার মতের সঙ্গে একাত্ম হলো। কৌতূহলীও হয়ে উঠলো।

এ সময় ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ানের সেনাবাহিনী রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করছিল। তাদের মধ্যে বহু সংখ্যক সৈন্য টাইফাস রোগে আক্রান্ত। কোনো চিকিৎসাই কাজে দিচ্ছে না। সেই সময় ডাকা হলো হানিম্যানকে। তিনি বিরাট সংখ্যক সৈন্যকে অল্পদিনের মধ্যেই সুস্থ করে তোলেন। এতে তার নাম ছড়িয়ে যেতে শুরু করলো। তারপরও নিজের দেশে সংগ্রাম করেই কাজ করতে হতো হানিম্যানকে।

কিন্তু তার জীবনের মোড় ঘুরে শেষ বয়সে। ১৮৩৪ সালে এক সুন্দরী নারী মাদাম মেলানি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন হানিমানের কাছে। মেলানি ছিলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পালিত কন্যা। হানিমানের সাথে সাক্ষাতের সময় তার বয়স ছিল ৩৫. মেলানি ছিলেন শিল্পী-কবি। বয়সের বিরাট ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে গড়ে উঠলো প্রেমের সম্পর্ক। বিয়েও হলো। মেলানি ফ্রান্স নিয়ে গেলেন হানিম্যানকে। সেখানেই প্রথম সরকারিভাবে হানিম্যান ডাক্তারি পেশা শুরু করেন।
জীবনের শেষ সময়ে এসে হানিম্যান পেলেন সব সংগ্রামের পুরস্কার, খ্যাতি, অর্থ।

৮৮ বছর বয়সে ১৮৪৩ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন যুগান্তকারী এই মহান মানুষটি অর্থাৎ হোমিওপ্যাথির জনক হানিম্যান
উনার নাম হয়ত অনেকের কাছেই অজানা। কিন্তু উনার কোম্পানি এর কথা আশা করি সবাই শুনে থাকবেন।জি হা, আমি বস এর কথা বলতেছি। এদের তৈরি স্পিকার, হেডফোন, কার অডিও এর কথা কে না জানেন। জুলাই এর ১২ তারিখ উনি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান পরপারে। উনি ছিলেন একাধারে বস এর ফাওন্ডার, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, চেয়ারম্যান এবং শিক্ষক।
১৯২৯ সালে অ্যামেরিকার ফিলাডেলফিয়া তে উনার জন্ম। মা ছিলেন একজন অ্যামেরিকান। কিন্তু বাবা ছিলেন বাঙালি , যার জন্ম ভারতের কলকাতা শহরে। উনি ছিলেন তৎকালীন ইন্ডীয়া ও বাংলার মুক্তিকামী, এর জন্যে উনাকে জেল ও খাটতে হয়েছিল। বস কলেজ শেষ করার পর অ্যামেরিকার সবচেয়ে নামি দামি ভার্সিটি এম।আই।টী। তে ভর্তি হন। গ্রাজুয়েশন করেন ইলেক্ট্রিক্যাল ইনজিনিয়ারিং এর উপর। এরপর তিনি গবেশনার খাতিরে ইন্ডিয়া, নেদারলেন্ড সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেন এবং পরে একই বিষয় এর উপর পি।এইচ।ডি করেন।
তিনি এম।আই।টি তেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং পরে প্রফেসর হন। ১৯৫৬ সালের এক গ্রীষ্মে তিনি একটি উচ্চ মানের স্টেরিও সিস্টেম কিনেন এবং খুবি হতাশ হন। তিনি বলেন, এটার টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী এটা তেমন একটা পারফর্মেন্স দিতে পারছে না। সংগীত উপভোগ করা যায় তখনই যখন মনে হয় শিল্পী আমার সামনে লাইভ পারফরমেন্স করছেন। এরপর তিনি গবেষণা শুরু করেন। দীর্ঘ ১০ বছর গবেষণার পর তিনি ১৯৬৬ সালে বস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি আজীবন অক্লান্ত পরিস্রম করেন সাউন্ড এর পিছনে। তিনি সাইকো অ্যাকাস্টিক নিয়ে বছরের পর বছর গবেষণা করেন।তার  বহু পেটেন্ট আছে। এর অনেক পেটেন্টই আজ সনি, কেনউড, পক অডিও এর মত কোম্পানি ব্যবহার করছে। আর বস এর স্পিকার এর কথা না হয় নাই বা বললাম। সারা দুনিয়া তে বস এর অডিও সিস্টেম এর খ্যতি এর কথা সবাই জানে। আপনারা কি জানেন? বস কিন্তু প্রাইভেট কোম্পানি। বস বলেন, শুধুমাত্র এই কারনেই তিনি সুদূরপ্রসারী গবেষণা করতে পেরেছেন অডিও এর উপর। তিনি বলেছেন, " আমি যেভাবে কাজ করে তাতে আমি কোন কোম্পানিই আমাকে চাকরিতে রাখত না। আমি টাকা কামানোর জন্যে কোম্পানি খুলিনি, আমি এমন কিছু করতে চেয়েছি যা এর আগে কেউ কখনো করেনি।"
১৯৫৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪৫ বছর তিনি এম।আই।টি তে শিখকতা করেন। ২০১১ সালে তিনি তার কোম্পানির বেশিরভাগ শেয়ার এম।আই।টি তে দান করেন। অডিও প্রযুক্তির পাইওনিয়ার এই বিজ্ঞানী ২০১৩ সালের ১২ই জুলাই মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। পৃথিবীর অনেক নামি দামী জায়গায় বস এর সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহৃত হয়, তার মধহে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হছহে, মুসলমানদের অত্তন্ত পবিত্র আর  প্রিয় মক্কা কাবা শরিফ(মসজিদ আল হারেম)।
আমি বাজি ধরে বলতে পারি অনেকেই এই বিখ্যাত ব্যক্তিটির কথা জানতেন না। আপনাদের কথা আর কি বলব, আমি নিজেই ত জানতাম না। নিজে কিছু জানলাম, ভাবলাম সবার সাথে শেয়ার করলে ভাল লাগবে। টিউনটি কষ্ট করে পরার জন্যে অসখ্য ধন্যবাদ।
প্রায় বেশির ভাগ মানুষই এই মহান গনিত বিদের নাম জানিনা।আর এই মহান গনিতবিদ হলেন এভারিস্ত গ্যালোয়া,যিনি একজনফরাসি গণিতবিদ। গ্যালোয়ার জন্ম ২৫অক্টোবর, ১৮১১। ১৪ বছর বয়সে গনিতের সাথে তার প্রথম পরিচয় ঘতে । তিনিই গ্রুপ থিউরির জনক । তাঁর কশির কাছে লেখা একটি চিঠিতে  তিনি প্রমাণ  করেন যে, পঞ্চম বা তার বেশি মাত্রার পলিনমিয়ালের সাধারণ সমাধান মূলকের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আবিষ্কারটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তিনি যে উপায়ে প্রমাণ করেন সেই উপায়টি। যেদিন প্রথম ক্লাশে গনিত পড়ানো হয়, তার মধ্যে যেন একটা বিপর্যয় ঘটে যায় । তিনি গনিতে এতই মজে ছিলেন যে, অন্য সব কিছু পড়া একেবারে ছেড়ে দিলেন। সব কিছুতে খুব খারাপ করতে লাগলেন । আগে তেমন খারাপ ছাত্র ছিলেন না, ল্যাটিন ভাষায় দক্ষতার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন , কিন্তু এখন অন্য বিষয় গুলোতে তার পাশ করার বেশ কঠিন হয়ে গেল। গনিত চর্চায় এতই এগিয়েছিলেন ,যে তার হঠাত মনে হওয়া শুরু হল, যে তাকে গনিতে  শেখানর মত স্কুলের শিক্ষকদের কাছে আর অবশিষ্ট কিছুই নেয় । ফলে নিজেই নিজের মত বই কিনে গনিত চর্চা শুরু করলেন । কিন্তু এইবার ভিন্ন সমস্যা শুরু হল। গ্যালোয়া যেই পরিমানে গনিত বুঝেন , তত গনিত আসলেও তার শিক্ষকরাও বুঝতেন না । ফলে পরিক্ষার খাতায় গ্যালোয়া যা উত্তর করেন তার কিছুই তাদের বোধগম্য হত না । এবার গ্যালোয়া গনিতেও খারাপ করা শুরু করলেন। ১৮২৮ সালে তিনি École Polytechnique  নামক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেন। এটা ছিলো গনিতের জন্য ততকালীন ফ্রান্সের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান । এরই মধ্যে তিনি পড়ে ফেলেছেন Adrien Marie Legendre' এর Éléments de Géométrie, Joseph Louis Lagrangeএর Réflexions sur la résolution algébrique des équations (এটি পরবর্তিতে তাকে ইকুয়েশন থিওরীতে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে), Leçons sur le calcul des fonctions ইত্যাদি । কিন্তু মৌখিক পরিক্ষায় গিয়ে তিনি পরীক্ষকদের কোন প্রশ্নের উত্তরেই সন্তুষ্ট করতে পারলেন না । আসলে তিনি তাদেরকে উত্তর এমন অল্পকথায় ব্যাখ্যা ছাড়া দিয়েছিলেন যে কেউ তা বুঝতে পারে নি । ফলে তিনি École Polytechnique তে ভর্তি হতে ব্যর্থ হন। পরে তিনি অপেক্ষাকৃত নিম্ন র‍্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয় 'École préparatoire তে ভর্তি হন সেই বছর। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ব্যর্থ গ্যালোয়া তার সমস্ত জিদ যেন ঢেলে দেন গনিতের উপরে । তুমুল উৎসাহে মেতে ওঠেন ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত আর পঞ্চঘাত সমীকরনে । ১৮২৯ সালে তার প্রথম গবেষনা পত্র প্রকাশ হয় Annales de mathematiquesএ continuous fraction এর উপরে । অনেক পরিস্রম করে ২ টি রিসার্চ পেপার তৈরি করে জমা দেন Academy of Sciencesএ । তখন Academy of Sciences. এর প্রধান ছিলেন বিখ্যাত গনিতবিদ Augustin Louis Cauchy । পেপার দুটির জন্য তিনি নিজেই সুপারিশ করেছিলেন।কিন্তু পেপার গুলো তেমন সাজানো ছিলনা।তাই তিনি গ্যালোয়ার কাছে পেপার দুটি ফেরত পাঠান পুনর্বিন্যাস ও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করে লেখার জন্য । বছর ঘুরতেই(১৮২৯) রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের  শিকার হয়ে গ্যালোয়ার বাবা আত্মহত্যা করেন। পিতার মৃতদেহ  সতকার করে গ্যালোয়া প্যারিস ফিরলেন,পরে পেপার দুটোর কাজ শেষ করে তার পেপার দুটি জমা দিলেন একাডেমির সেক্রেটারি স্যার জোসেফ ফুরিয়ারে কাছে । কিন্তু সেবার গ্যালোয়া পুরস্কার পান নি । পুরস্কার ঘোষনার কিছু দিন আগে ফুরিয়ার মারা যান এবং তার পেপার যে জমা হয়েছে এমন কোন ডকুমেন্টের অস্তিত্বই ছিল না । ফলে  রাজনৈতিক কারনে গ্যলয়ার পেপার গায়েব হয়েছে বলে তার সন্দেহ হল । এই সন্দেহ পুরোপুরি বাস্তবে প্রমানিত হল যখন তার পরে একাধিক গবেষনা পত্র একাডেমি অফ সায়েন্স ফেরত পাঠাল অযৌক্তিক ও অবোধ্য এর খোড়া যুক্তি দেখিয়ে (১৮৩০)। সে বছর গ্যালোয়া মোট ৩টি গবেষনা পত্র প্রকাশ করেন , যার মধ্যে একটি বিখ্যাত Galois theory এর ভিত্তি গরে দেয় , অন্য দুইটি ছিল আধুনিক উপায়ে সমিকরনের মুল নির্নয় সম্পর্কিত এবং নাম্বার থিওরি নিয়ে । শেষক্তটি বেশ গুরুত্ববাহি কারন finite field এর এর ধারনা প্রথম এখানে পাওয়া যায় । সে বছর গ্যালোয়া তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিরেক্টরকে গালিগালাজ করে একটি প্রতিবেদন লেখেন । ডিরেক্টর ছিলেন প্রজাতন্ত্রের সমর্থক। সুতরাং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয় । এর পর তিনি যেন পুরোই উচ্ছনে গেলেন । বছর ঘুরতেই(১৮৩১) মদ আর সন্ত্রাস তার নিত্যসঙ্গী। কখনও চাকু হাতে সম্রাটকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন খোলা রাস্তায়, তো পরক্ষনে গ্রেফতার। ছাড়া পেয়ে আবার নিষিদ্ধ ন্যাশ্নাল গার্ডের পোশাক পরে রাস্তায় বের হলে তার জেল হয়ে যায় । এক মাস পর গ্যালোয়া জেল থেকে ছাড়া পান । কিছুদিন পর তার প্রনয়ের খবর চাঊর হয়ে গেল। প্রয়সী স্টাফানি ফেলিসি । স্টাফানি এক বিখ্যাত ডাক্তারের মেয়ে, প্যারিসের এক সম্ভ্রান্ত বংশের ছেলে পেশ্চু ডি’হেরবিনভিল এর বাগদত্তা । পেশ্চু এই ঘটনায় খুব রেগে গেলেন। অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুটিং ডুয়েলের চ্যালেঞ্জ দেন গ্যালোয়াকে । ডুয়েলের আগের রাতে(১৮৩২) নিজের মৃত্যু সম্পর্কে গ্যালোয়া এতই নিশ্চিত ছিলেন যে সারারাত জেগে তার থিওরেমগুলো লিখে ফেলেন। তার সে রাতের কাজের মধ্যে দিয়ে আলোর মুখ দেখে গ্রুপ থিওরি। সাথে একটি চিঠি লিখেন যে তার যদি পরদিন ডুয়েলে মৃত্যু হয় তাহলে যেন তার কাজগুলোকে ইউরোপের বড় বড় গনিতবিদদের কাছে পৌছে দেয়া হয়। পরদিন,৩০মে,১৮৩২, ডুয়েলে গ্যালোয়াকে নিখুত নিশানায় ভুলুন্ঠিত করে । ৩১মে মৃত্যু হয় মহান গনিতবিদ গ্যালোয়ার । কিন্তু মাত্র একরাতে গ্যালোয়া যা লিখছিলেন তার মর্ম উদ্ধার করতে গাউস,জ্যাকোবিদের অনেক গলদঘর্ম হতে হয়েছে । গ্যালোয়ার মৃত্যুর ১৪ বছর পর, ১৮৪৬ সালে লিউভিল সেই কাগজগুলো থেকে যে থিওরি উদ্ধার করেন তা তিনি গ্যালোয়ার থিওরি নামে প্রকাশ করেন । তার কাজের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে গ্যালোয়া থিওরি এবং গ্রুপ থিওরি, যা কিনা Abstract Algebra এর দুটি প্রধান শাখা ।আর,এভাবেই রাজনীতির রোষানলে পরে মহান গনিতবিদ এভারিস্ত গ্যালোয়ার জিবনাসন ঘটে।
বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন
বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন
ব্যক্তিগত কিছু ব্যয়ের বেলায় বেশ উদার বিল গেট্স। বাড়ির পেছনে ৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় করা এবং দামি গাড়ি পোর্শের পেছনে ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার ঢেলে দেয়া কোনো ব্যাপার নয় বিল গেট্স এর কাছে। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবহার্য জিনিসে তার হাতের তালু ফসকে টাকা বের হয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিল গেট্স প্রচুর টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও বহু বছর ধরে সাধারণ বিমানে ভ্রমণ করেছেন।
বিল গেট্স নিজের ও পরিবারের ব্যবহারের জন্য একটি কর্পোরেট জেট বিমান কেনেন ১৯৯৭ সালে। তবে এখনও ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাণিজ্যিক বিমানে সাধারণ যাত্রীদের আসনে ভ্রমণ করেন বিল গেট্স। আর ব্যক্তিগত বিমানে যাতায়াত করলে, এর খরচের টাকা কখনও মাইক্রোসফট থেকে নেন না বিল গেট্স।
”এটা এক ভালো দৃষ্টান্ত। বিমানে সাধারণ শ্রেণীতে টাকা কম লাগে। আর সাধারণ শ্রেণীতে গেলে যা, প্রথম শ্রেণীতে বসে ভ্রমণ করলেও তাই। আমি যদি মোটাসোটা বা অনেক লম্বা হতাম, তাহলে হয়তো এই আসন নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম। তাছাড়া এখানে আরেকটা ব্যপার রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ১৪ সপ্তাহ বিমানে ভ্রশন করতে হয়ে আমাকে। মাঝেমধ্যে সাধারণ শ্রেণীর টিকিট থাকা সত্ত্বেও আমাকে প্রথম শ্রেণীতে ডাকা হয়। কখনও এমন সুযোগ পেলে ফিরিয়ে দিই না।”
বিমানে যখন রাতভর ভ্রমণ করতে হয়, বিল গেট্স তখন প্রায়ই পেছনে গিয়ে একসারি খালি আসন খুঁজে বেড়ান। পেয়ে গেলে তো তোফা! হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমানো যায়।
বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন
বিল গেট্স যে সব জায়গায় টাকা ফুরাতে রাজী নন
বিল গেট্স বলেছেন, “এ সুযোগ পেলে প্রথম শ্রেণীর আসনের চেয়ে অনেক বেশি আরামে ভ্রমণ করা যায়।” 
১৯৯২ সালের ঘটনা, বিল গেট্স তখন রীতিমতো বিলিওনিয়ার। বিমানে করে যাওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত সহকারি মেয়েটি জানাল, ঘেমে যাচ্ছে সে। তার একটু সাহাস্য প্রয়োজন। বিল গেট্স সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ”আমি তোমাকে সাহায্য করার কে? রানী নাকি?”
সময়ের ব্যাপারে খুবই মিতব্যয়ী বিল গেট্স। মাইক্রোসফটের যাত্রালগ্ন থেকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটে আসছেন বিল গেট্স। এ কারণে তার চলাফেরায় সব সময় একটা ব্যস্ততা থাকেই। কখনও যদি তার বিমান সকাল ১০টায় ছাড়ার কথা থাকে, অফিস থেকে তিনি বেরোবেন ৯টা ৫০ মিনিটে। দ্রুতবেগে ছুটবেন বিমান বন্দরের দিকে। প্রায়ই এমন পরিস্থিতি হয়, বিমানের দরজা বন্ধ করার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে গিয়ে হাজির হন বিল গেট্স। ঝুঁকি নেবেন, তবু আগে গিয়ে বসে থেকে সময় অপচয় করবেন না।
সময় বাঁচানো প্রসঙ্গে বিল গেট্স বলেছেন:
”যখন কোনো সভায় যোগ দিতে যাই, নির্দিষ্ট কিছু বিষয় থাকে মাথায়। কাজেই খুব বেশি কথা বলে সময় নষ্ট করতে হয় না। বিশেষ করে যে কলিগদের সম্পর্কে খুব ভালো করে জানি, তাদের সঙ্গে বৈঠকে সময় অপচয় হয় না। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়াচ্ছে, কাজেই সময় নষ্ট করব কেন?”
মাইক্রোসফটের অন্যতম সেরা প্রোগ্রামার চালর্স সিমোনি বলেছেন, ”বিল গেট্স কখনও একটা জিনিস দুবার ব্যাখ্যা করেন না।”
বিল গেট্স বলেন:
”যেহেতু কাজ অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনে আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় নেই, কাজেই দুটো কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা। এই যেমন- একসঙ্গে প্যাডাল মেরে ব্যায়াম করা এবং পত্রিকা পড়া। দুটো কাজই নিখঁতভাবে করতে পারি। এটা একসঙ্গে একাধিক কাজ করার খুবই বাস্তববাদী কৌশল।”
বিল গেট্স বলেছেন, “এখন যেহেতু তার পরিবার রয়েছে, কাজেই রাতভর কাজ করা আর সম্ভব নয়। ঘুমানোর জন্য আলাদা বিশেষ কোনো সময় নেই তার। ফাঁক পেলে তাৎক্ষনণকভাবে ঘুমিয়ে ঝেড়ে ফেলেন ক্লান্তি।”
বিল গেট্স বলেছেন:
”যারা প্রতিদিন রাতে তিন-চার ঘন্টা করে ঘুমান, তাদের আমি ঈর্ষা করি। কারণ তারা কাজ করার প্রচুর সময় পান। বেশি করে শিখতে পারে। খেলতে পারে।”
বিল গেট্স এর কাজের ধরন সরাসরি এবং সাদাসিধা। কোম্পানির শুরু থেকে তিনি একভাবে কাজ করে আসছেন। সেকেলে রীতি অনুসরণ করে কোনো সেক্রেটারি রাখেন না বিল গেট্স। অবশ্য বিভিন্ন আয়োজনের জন্যে তার একজন অ্যাসিট্যান্ট বা সহকারি রয়েছে।
বিল গেট্স জানিয়েছেন :
”আমার যত ইলেকট্রনিক মেইল- সব সরাসরি চলে আসে। আমি নিজে এসব মেইলের উত্তর দিই। আমার সব মেমো এবং চিঠি নিজে টাইপ করি। আমার অফিসকক্ষের বাইরে যে প্রশাসনিক সহকারি বসেন, তার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ টাইপ করি আমি।”
বিল গেট্স প্রতিদিন সময়টাকে ঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন কিনা, স্টিভ বলমার তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন। এতে সঠিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় বিল গেট্স এর।
বিল গেট্স বলেছেন :
”কোম্পানির যেসব জিনিস থেকে আমি শতাংশ আয় হয়, সেসব জিনিসের প্রতি গভীরভাবে মন দিই আমি।”
সময় এবং টাকা বাঁচানোর ক্ষেত্রে বিল গেট্স এর মিতব্যয়ী স্বভাবটাই বেশি কাজ করে।
বিল গেট্স বলেছেন :
”একটা জিনিসকে ঠেলে একেবারে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পছন্দ করি আমি। এতে প্রায়ই উঁচুমানের কাজ পাওয়া যায়।”
সেই ২০০৪ সালের কথা। ২৭ বছরের যুবকটি এমআইটি থেকে মাত্র পড়াশোনা শেষ করে চাকুরীতে ঢুকেছেন। সারাদিন অফিস করেন- গবেষণা করেন। কিন্তু কেমন যেন একঘেয়েমি জীবন। বিয়ে করে বোস্টন শহরে ঘর বাঁধলেন। কিছুতেই পরিপূর্ণ স্বস্তি পাচ্ছেন না। সৃজনশীল মন শুধু ভেবেই চলে - নতুন কি করা যায়।
একদিন মামার মুখে শুনলেন মামাতো বোন নাদিয়া গণিতে নাকি খুব কাঁচা। গণিতপ্রেমী এই যুবক বোনের গণিতের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়ে নিলেন। নাদিয়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলেন, অঙ্ক কষে সময় নষ্ট করার চেয়ে অন্য কাজে সময় ব্যয় করতেই ভালো লাগে নাদিয়ার। গণিতের প্রতি অনাগ্রহের আরেকটা কারণ পাঠদান প্রক্রিয়া। অনেক ভেবে ভেবে গণিত শেখানোর নতুন নতুন কৌশল বের করলেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে ফল দেখতে পেলেন । নাদিয়া গণিতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেখা গেল অন্য কাজ ফেলে সারাদিন গণিতেই নিবিষ্ট নাদিয়া। এরই মধ্যে মামা সপরিবারে অন্য শহরে চলে গেলেন। কিন্তু নাদিয়ার গণিত শিক্ষা থামল না। যুবকটি টেলিফোনে - ইয়াহু ডুডল সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাঠদান চালাতে থাকলেন। বিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করা শুরু করল নাদিয়া। নাদিয়ার সঙ্গে তাঁর দুই ভাই আরমান ও আলীকেও পড়ানো শুরু করলেন। পুরো ব্যাপারটা করে যাচ্ছিলেন নেশার মত। কিন্তু হঠাত করে দেখলেন টাইম মিলছে না। তিনি হয়তো চাকুরী থেকে ফিরলেন, ভাইবোন সব ব্যস্ত অন্য কাজে। আবার একই পাঠ অনেক সময় একবারের বেশী দিতে হচ্ছে। ভেবে ভেবে নতুন সমাধান বের করলেন। ভিডিও তৈরি করলেন। আপলোড দিলেন ইউটিউবে। এর মাধ্যমে সহজেই নাদিয়া ও তার দুই ভাই বাড়ীতে বসেই গণিতের লেসন গুলো পেয়ে যাবে। কিছুদিন পর লক্ষ্য করলেন, শুধু তার ভাইবোন না অনেকেই তার ভিডিও দেখা শুরু করেছে। অল্পদিনের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেলেন তিনি। এই জনপ্রিয়তা এতই বাড়ল যে, এক পর্যায়ে তিনি এক দুঃসাহসীক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। নটা-পাঁচটার নিয়মিত চাকরী ছেড়ে দিয়ে অনলাইন ফ্রি টিউটোরিয়াল বানানোকেই ফুলটাইম কাজ হিসেবে নিয়ে নিলেন। নিয়মিত কিছুকিছু করে তৈরি করতে করতে আজ পর্যন্ত ১৮০০+ টিউটোরিয়াল একদম একাএকাই তৈরি করে ফেললেন। প্রতিষ্ঠা করলেন "খান একাডেমী"।
সালমান আমির খান
সালমান আমির খান
হ্যাঁ আমি খান একাডেমী এর প্রতিষ্ঠাতা সালমান আমির খানের কথাই বলছিলাম। ৩ ভাইবোনের জন্য তৈরি পাঠদানের পদ্ধতি আজ কেবল ইউটিউবেই ১৩ লক্ষ মানুষ সাবস্ক্রাইব করে নিয়মিত দেখছে। ২০১৩ এর মে মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী খান একাডেমীর ভিডিওগুলো ইউটিউবে মোট ৩০ কোটিবার দেখা হয়ে গেছে। শুধু গণিত নয়,ইতিহাস, স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা, জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, ইত্যাদি বিষয়ের উপর ৪৫০০ এর বেশী মাইক্রো লেকচার বিনামূল্যে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওগুলির ব্যাপারে বলতে গেলে, প্রথমত কোন ঝকমকা এনিমেশন নাই, গ্রাফিক্সের বলিহারি নাই, দিব্যি কালো একটা স্ক্রীন তার মাঝে কিছুক্ষণ পরে পরে কাঁচা হাতে আঁকিবুকি হচ্ছে আর কেউ একজন ঘ্যানঘ্যান করে অডিওতে কথা বলছে। প্রশ্ন হল এইখানে ম্যাজিকটা কোথায়? একটু ফিরে যান আপনার ছোটবেলায় স্কুলের দিনগুলিতে। আমার বিশ্বাস প্রত্যেকেরই অভিজ্ঞতা আছে নিজের বড়ভাই, পাড়ার বড়ভাই বা পাশের বিল্ডিং এর ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া যিনি আপনার পড়াশোনার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী বদলানো ও সমস্যা সমাধানের মৌলিক আগ্রহ জাগানোর জন্য অসাধারণ অবদান রেখেছেন। ভিডিওর ধরণটাও অনেকটা তেমনই। শুনলে মনেই হবেনা যে ক্লাস করছেন, মনে হবে এই সাধারণ একটা জিনিষ কেউ একজন আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। যিনি বোঝাচ্ছেন, তিনি নিজেও আপনার চেয়ে মহা আঁতেল কেউ না, বরং ভাবখানা যেন আমিও গত সপ্তাহেই শিখেছি ব্যাপারটা, ভূলে যাবার আগেই তোমারে একটু শিখায়ে দেই। খুব সীমিত দৈর্ঘের (৩-৭ মিনিট) এই ভিডিওগুলোতে যেকোন বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য একদম ডুবে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই টের পাবার আগেই দেখা যাচ্ছে উল্লেখিত ক্লাসের বিষয়টি শিক্ষার্থী শিখে ফেলছে। আর এই অদ্ভূত অভিজ্ঞতা একজন, দুইজন না বরং আমেরিকা ও সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর এখন। উঁচু বেতনের অফিস ফেলে গোঁয়ারের মত লেগে থাকার ফলে সালমান খান বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে একজন প্লাস রীতিমত সেলিব্রিটি।
TED এ সালমান খানের বক্তব্য দেখুনঃ
ভাবতে ভালো লাগে এই মহান শিক্ষকের বাবা আমাদের দেশের বরিশালেরই মানুষ। বাবা ফখরুল আমিন খান পেশায় ছিলেন একজন চিকিৎসক। দাদা আবদুুল ওয়াহাব ছিলেন ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার। সালমানের বাবা বিয়ের পর পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই ১৯৭৭ সালে লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে সালমান জন্মগ্রহণ করেন, সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা। মেধাবী সালমান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটি (এমআইটি) থেকে গণিত এবং তড়িৎকৌশল ও কম্পিউটার—এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন। একই
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎকৌশলের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সালমান। অতঃপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে।
খান একাডেমী প্রতিষ্ঠার সময় যখন সালমানের বন্ধুদের সামনে তিনি পুরো পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন প্রথম যে প্রশ্নটির সম্মুখীন হয়েছিলেন তা হলো, এই সাইট থেকে তিনি কীভাবে অর্থ উপার্জন করবেন। উত্তরে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে তিনি বলেছিলেন, এর থেকে আয় করার প্রয়োজন নেই তাঁর। সালমানের মতে, খান একাডেমির উদ্দেশ্য হচ্ছে, সবাইকে বিভিন্ন বিষয়ের মৌলিক সব ধারণা পেতে সহায়তা করা। তিনি ইচ্ছে করলেই তাঁর ভিডিওগুলো কিংবা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াকে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে দিতে পারতেন, একাধিকবার এমন প্রস্তাবও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু না, তিনি সে পথে হাঁটেননি। জ্ঞানকে ব্যবসার পুঁজিতে পরিণত না করে তিনি বিনা মূল্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারা পৃথিবীতে, শিশু থেকে বৃদ্ধ—জ্ঞানপিপাসী সব মানুষের মাঝে। ভালো কাজের জন্য অর্থ কোন সমস্যা না। প্রথম দিকে ভিডিও গুলো নিজেই নিজের খরচে তৈরি করতেন। ২০১০ সালের মে মাস থেকে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার এই প্রজেক্টে এগিয়ে আসে। ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান আসতে থাকল। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুগল তাদের প্রজেক্ট টেন টু দ্য হান্ড্রেড-এ খান একাডেমীকে ৫ টি প্রজেক্টের একটি হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে ও ২ মিলিয়ন ডলার দেয় যাতে খান একাডেমী আরো বেশি কোর্স তৈরি করে ও সারাবি
শ্বে জনপ্রিয় ভাষায় সবগুলি লেসন/টিউটোরিয়ালকে অনুবাদ করে। খান একাডেমীর ভিডিও লেকচারগুলো দেখে মুগ্ধ মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ ধনী বিল গেটস। Aspen Ideas Festival-এ বিলগেটস বলেছিলেন, তিনি ও তার তের বছর বয়সী সন্তান ররিকে নিয়ে ইউটিউবে নিয়মিত খান একাডেমীর লেকচার দেখে গণিত শেখেন। বিল এন্ড মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশন থেকেও বড় অ্যামাউন্টের টাকা দেয়া হয়।
খান একাডেমীর ভিডিও ভিত্তিক এই শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত ক্লাসরুম ধারণাকে উলটে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে লস অ্যালটোসের একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের যেসব লেকচার পড়তে হবে, তা বাসায় বসে খান একাডেমির সাইট থেকে দেখে আসে এবং স্কুলে এসে শ্রেণীশিক্ষকের সহযোগিতায় ক্লাসওয়ার্ক (আগে যা ছিল হোমওয়ার্ক) করে। এতে ক্লাসে শিক্ষক তাঁর সম্পূর্ণ সময় ও মনোযোগ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারেন, তাঁদের সমস্যা সমাধান করতে পারেন, যা আগে কখনো সম্ভব ছিল না।
সালমান খান একজন মহান শিক্ষক, যাঁর স্বপ্ন শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দেওয়া। কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হয়েও তিনি শেখাচ্ছেন সারা পৃথিবীকে ।
গুটিকয়েক মানুষের হাত ধরে তথ্য-প্রযুক্তির জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তাদের হাত ধরে যে সুফল এসেছে তাই আজ আমরা ঘরে বসে বেশ উপভোগ করছি। আর একারনেই সেই সব সফল উদ্যেক্তা এবং পথ প্রদর্শকদের আদর্শ হিসেবে মানছেন বর্তমানের টেক এক্সপার্টরা। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের মনে ঘুরপাক খায় সেই সব সফল ব্যক্তিদের জীবন কেমন ছিল, কৈশরে তার দেখতে কেমন ছিলেন। অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও স্টিভ ওয়াজনিয়াক থেকে মাইক্রোসফটের বিল গেটস এবং স্টিভ বলমের সবাই প্রযুক্তির জগতে বেশ ঝড় তুলেছেন।
তাদেরই কিছু হাসিখুশি, বিশ্রী এবং ভদ্র ইয়ারবুক ফটো নিয়ে আজকের আয়েজন।
১। অ্যাপলে সিইও স্টিভ জবসের স্কুল জীবন কেটেছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপোর্টিনোতে। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্টিভ ওয়াজনিয়াকের। এদের দু’জনেরেই ছিল কৌতুক ও কম্পিউটারের জন্য ভালোবাসা। এরাই শেষ পর্যন্ত অ্যাপলের মতো একটি টেক জয়ান্ট কোম্পানির গোড়াপত্তন করেন।
২। অন্যদিকে মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বেড়ে উঠেছেন ওয়াশিংটনের সিয়াটলে। সেখানে তিনি লেক সাইড স্কুল নামে অনেক ভালো একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পান। সেখানেই প্রথম তিনি কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পান। এরপর গেটস চলে যান হারভার্ডে এবং পরবর্তীতে পল অ্যালেনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট।
৩। অ্যাপল সিইও টিম কুকের নেতৃত্বেই বর্তমানে চলছে অ্যাপল। এই টিম কুক বেড়ে উঠেছেন আলবামাতে। সেখানে তিনি রবার্টসডেল হােইস্কুলে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে অবার্ন এবং ডিউকের পাঠ চুকিয়ে এবং আইবিএমের ১৩ বছর কাটিয়ে তিনি ১৯৯৮ সালে যোগদান করেন অ্যাপলে।
৪। বিশ্বের সবেচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেট আমাজনের কথা কে না জানে। এই আমাজনকে গড়ে তুলেছেন জেফ বুজেছ। তিনি নিউ মেক্সিকোর আলবুকেরকিতে জন্ম নেন। তবে তার স্কুল জীবন কাটে ফ্লোরিডায়। মায়ামি পালমেটো সিনিয়র স্কুলে তিনি পড়াশোনা করতেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা এবং প্রিন্সটোনে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি আমাজন গড়ে তুলেন।
৫। প্রযুক্তিপন্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠন ডেল এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মাইকেল ডেল টেক্সাসের হিউস্টোনে বেড়ে উঠেছেন। সেখানে তিনি হ্যারোড অ্যালিমেন্টারী স্কুল এবং মেমোরিয়াল হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে পড়াশোনাকালীন সময়ে ডেল কম্পিউটার আপগ্রেড বিক্রি এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ডেল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন মাইকেল ডেল।
৬। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মেইল চালাচালির বিষয়টি স্বাভাবিক একটি বিষয়। একই সঙ্গে তা যোগাযোগের অন্যতম এক মাধ্যম। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত মেইল সার্ভিসের মধ্যে একটি হল ইয়াহু। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও জেরি ইয়াং জন্মগ্রহন করেন তাইওয়ানে। তবে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সেন জোসে বেড়ে উঠেছেন। সেখানে তিনি সিইয়েরামন্ট হাই স্কুল এবং পিডমন্ট হিল্স হাইস্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছেন। তিনি যখন স্ট্যানফোর্ডে পড়াশোনা করতেন তখন তার সঙ্গে দেখা হয় ডেভিড ফিলোর এর পর দুইজন মিলে ১৯৯৪ সালে গড়ে তুলেন ইয়াহু।
ধন্যবাদ সবাইকে ভালো থাকবেন।
কালের গর্ভে আমরা অনেক মহান ব্যক্তিকে হারাতে বসেছি। কিন্তু এককালে তাদের অবদানের কারনেই আজ আমরা এ স্থানে আসতে পেরেছি। সেসব মানুষের মধ্যে এরিষ্টটল অন্যতম। চলুন আজ তার সম্পর্কে জানি।

বিশ্ববিজয়ী সম্রাট আলেকজান্ডার দুঃখ করে বলেছিলেন, জয় করাবার জন্য পৃথিবীর আর কোন দেশই বাকি রইল না। তাঁর শিক্ষক মহাপন্ডিত এ্যারিষ্টটল সমন্ধেও একই কথা প্রয়োজ্য। জ্ঞানের এমন কোন দিক নেই, তিনি যার পথপ্রদর্শক নন। তাঁর Poetics গ্রন্থে তিনি নাট্যতত্ব ও কাব্যতত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। আধুনিক জীববিজ্ঞানের জনক তিনি। তিনি বহু দার্শনিক তত্বের প্রবক্তা। তাঁর চিন্তা জ্ঞান মনীষা প্রায় দুই হাজার বছর ধরে মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছিল।
এরিষ্টটল ৩৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসিডনিয়ার নিকটবর্তী স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা নিকোম্যাকাস ছিলেন মেসিডনিয়ার রাজ দরবারের একজন চিকিৎসক। শৈশবে ঘরেই পড়াশোনা করেন এ্যারিস্টটল। ১৭ বছর বয়সে পিতা-মাতাকে হারিযে গৃহত্যাগ করেন।
৩৬৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্স যান এবং প্লেটোর ‘একাডেমিতে’ পড়াশোনা শুরু করেন। সেই সময় এথেন্স ছিল শিক্ষার কেন্দ্র। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গড়ে তুলেছেন নতুন এ্যাকাডেমি। সেখানে ভর্তি হলেন এ্যারিস্টটল। অল্প দিনের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় তিনি হয়ে উঠলেন এ্যাকাডেমির সেরা ছাত্র। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। প্লেটোর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ বিশ বৎসর তিনি প্লেটোর একাডেমিতে শিক্ষা লাভ করেন। এরপর এথেন্স নগরী ত্যাগ করে এশিয়া মাইনরে চলে যান।
শিক্ষাদান ছাড়াও নানান বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করতেন এ্যরিস্টটল। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, প্রকৃতিবিজ্ঞন, জীববিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র। অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পান্ডিত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। ম্যাসিডনের রাজা ফিলিপেরও অজ্ঞত ছিল না। পুত্র আলেকজান্ডারের জন্ম সময়েই তাঁর শিক্ষার ভার অর্পণ করেন এ্যরিস্টটলের উপর। তখন এ্যারিস্টটল আটাশ বছরের যুবক। আলেকজান্ডার যখন তেরো বছরের কিশোর, রাজা ফিলিপের আমন্ত্রণে এ্যারিস্টটল এসে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করলেন। শ্রেষ্ঠ গুরুর দিগ্বিজয়ী ছাত্র। বহু প্রাচীন ঐতিহাসিকের ধারণা এরিস্টটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারে অদম্য মনোবল আর লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। প্রকৃতপক্ষে একজনের ছিল সমগ্র পৃথিবীকে জয় করে তার উপর প্রভুত্ব করবার প্রবল ইচ্ছা। অন্য জনের ছিল জ্ঞানের নতুন নতুন জগৎ অাবিস্কার করে মানুষের জন্য তাকে চালিত করার ইচ্ছা। এ্যরিস্টটলের প্রতি রাজা ফিলিপেরও ছিল গভীর শ্রদ্ধা। শুধু পুত্রের শিক্ষক হিসেবে নয়, যথার্থ জ্ঞানী হিসেবেও তাকে সম্মান করতেন। এ্যারিস্টটলের জন্মস্থান স্তাজেইরা কিছু দুর্বৃত্তের হাতে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেখানকার বহু মানুষ বন্দি জীবনযাপন করছিল। রাজা ফিলিপ এ্যারিস্টটলের ইচ্ছায় শত্রু সেটার হাত থেকে শুধু স্তাজেইরা উদ্ধার করেননি, ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে শহরকে নতুন করে গড়ে তুললেন।
এ্যারিস্টটল একদিকে ছিলেনে উচ্চমানের জ্ঞানী, অন্যদিকে সার্থক শিক্ষক। তাই গুরুর প্রতি আলেকজান্ডারের ছিল অসীম শ্রদ্ধা। তিনি বলতেন, “পিতার কাছে পেয়েছি আমার এই জীবন, আর গুরুর কাছে শিক্ষলাভ করেছি; কী ভাবে এ জীবনকে সার্থক করা যায় তার জ্ঞান।” এ্যারিস্টটল যখন জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার কাজ করছিলেন আলেকজান্ডার তাঁর সাহায্যের জন্য বহু মানুষকে নিযুক্ত করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল বিভিন্ন মাছ, পাখি, জীবজন্তুর জীবন পর্যবেক্ষণ করা, তার বিবরণ সংগ্রহ করে পাঠানো। দেশ-বিদেশের যেখানেই কোন পুঁথি পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যেত, আলেকজান্ডার যে কোন মূল্যেই হোক পুঁথি পান্ডলিপি সংগ্রহ করে গুরুর হাতে তুলে দিতেন।
আলেকজান্ডার যখন এশিয়া জয়ের নেশায় সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হলেন, এ্যারিস্টটল ফিরে গেলেন এথেন্সে। তখন এথেন্স ছিল শিল্প সংস্কৃতি শিক্ষার পীঠস্থান। এখানেই স্কুল স্থাপন করলেন এ্যরিস্টটল। তখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ বছর। ৩৩৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এরিষ্টটল তার নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘লাইসিয়াম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই লাইসিয়ামে সাধারনত বাস্তব গবেষনার উপর জোর দেয়া হত। বস্তত ঞ্জান ও গবেষনার সংগঠক এরিষ্টটল দস্তুর মত একটি জীব গবেষনাগার তৈরি করেছিলেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার পরিচয় লাভের জন্য এরিষ্টটল ১৫৮ টি রাষ্টের সংবিধান ও শাসন ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহ করে সংবিধানের একটি গ্রন্থাগারও তার লাইসিয়ামে গড়ে তোলেন।
আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যু হল। এতদিন বীর ছাত্রের ছত্রছায়ায় যে জীবন যাপন করতেন, তাতে বিপর্যয় নেমে এল। কয়েকজন অনুগত ছাত্রের কাছ থেকে সংবাদ পেলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সক্রেটিসের অন্তিম পরিণতির কথা অজানা ছিল না এ্যারিস্টটলের। তাই গোপনে এথেন্স ত্যাগ করে ইউরিয়া দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। কিন্তু এ স্বেচ্ছানির্বাসনের যন্ত্রণা বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি এরিস্টটলকে। ৩২২ খ্রিস্টপূর্বে ৬২ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
অবশেষে ৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৬৩ বছর বয়সেই তিনি মৃত্যু বরন করেন।
এ্যরিস্টটল সমস্ত জীবন ধরে যে সমস্ত রচনা করে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে তা তাঁর শিষ্য থিওফ্রাস্তাসের হাতে দিয়ে যান। থ্রিওফ্রাস্তাসের পর সেই সমস্ত রচনাবলির উত্তরাধিকারী হন তাঁর শিষ্য নেলেওস। নেওলসের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্ররা সেই সমস্ত রচনাবলিকে লোহার সিন্দুকে পুরে এ্র্যারিস্টটলের সমাধির নিচে পুঁতে রাখেন। দুশো বছর পর রোমের সেনাবাহিনী যখন গ্রিস দখল করে তখন সেই পুঁধি উদ্ধার করে রোমে নিয়ে আসা হল। সমস্ত রচনাই জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। বহু প্রচেষ্টায় সে সমস্ত পুঁথির অনুলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং তার ভিত্তিতেই এ্যারিস্টটলের রচনাবলি প্রকাশিত হয়।
বিষয়বস্তুর নিরিখে এ্যারিস্টটলের রচনাবলিকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। তর্কবিদ্যা, অধিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, অলংকারতত্ব, কাব্যত্ব। এ্যরিষ্টটলের রচনার সংখ্যা এ হাজারের কাছাকাছি। তবে এর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সমান্য যা কিছু পাওয়া গেছে তা থেকেই অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, কি ব্যাপক ছিল তাঁর প্রতিভা। ভুল-ত্রুটি থাকা সত্বেও তিনিই প্রথম মানুষের কাছে জ্ঞানের মশালকে তুলে ধরেন।
এ্যারিস্টটলের রচনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল মেটাফিজিক্স (অধিবিদ্যা) এবং এথিক্স (নীতিশাস্ত্র)। এই বইগুলির মধ্যে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন, জীবন গতিশীল এবং ক্রমাগতই তার বিকাশ ঘটছে। এই সমস্ত রচনার মধ্যে অনেক নির্ভুল তত্ত্ব থাকলেও জ্যোতিবির্জ্ঞান ও পদার্থ বিদ্যার ক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে কল্পনার ও অযৌক্তিক ধারণার প্রভাবই বেশি। এর কারণ কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তিনি এই সব বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। যেমন তিনি বলতেন, যদি একই সাথে একটি ভারি ও হালকা বস্তুকে উপর থেকে ফেলা হয় তবে ভারী বস্তুটি আগে পড়েবে। বহু শত বছর পর গ্যালিলিও প্রমাণ করলেন (পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে) দুটি বস্তুই একই সাথে মাটিতে পড়ব্ এছাড়া তিনি বিশ্বাস করতেন পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই স্থির। তাকে গতিশলি করবার জন্য বল প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্র্রেও এ্যরিস্টটলের আধিকাংশ মতামতই ছিল ভ্রান্ত। এ্যরিস্টটল লিখেছিলেন পৃথিবী স্থির। তাকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের চাঁদ, তারা, সূর্য জ্যমিতিক পথে ঘুরছে। গ্যালিলিও প্রথমে এই ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেন। তাঁর অভিমত ছিল, চাঁদের নিজস্ব আলো আছে। উত্তরকালে প্রমাণিত হয়েছে-চাঁদের কোন আলো নেই।
তাঁর এসব ভ্রান্ত মতামত কয়েক শতাব্দী ধরে সমাজকে চালিত করেছে। তার জন্য এ্র্যরিস্টটলকে অভিযুক্ত করা যায় না। উত্তরকালের মানুষেরই দায়িত্ব ছিল তাঁর গবেষণার সঠিক মূল্যায়ন করা। কিন্তু সে কাজে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। এ সমস্ত ভ্রান্তি থাকার সত্বেও এ্যরিস্টটল মানব ইতিহাসের এক শ্রেষ্ঠতম প্রাজ্ঞ-যার সৃষ্ট জ্ঞানের আলোয় মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করেছে, মহত্তর পর্যায়ে উন্নত করেছে।
এরিষ্টটল অনেক বিখ্যাত গ্রন্থ লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হচ্ছে-
  • The Politics;
  • The Megna Moralia;
  • The Constitution of Athens;
  • The Ethics;

আমরা আজ The Politics গ্রন্থটি কিছুটা বিশ্লেষণ করবোঃ-

Politics গ্রন্থে রাষ্ট্র সম্পর্কিত যাবতীয় চিন্তার পূর্নবিকাশ সাধিত হয়েছে। আটটি পুস্তক সমন্বয়ে রচিত এই গ্রন্থের বিষয় ও পুস্তক বিন্যাস যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর। এই বিভ্রান্তির কারনে অনেকে মনে করেন যে, Politics এর বর্তমান পান্ডুলিপির বিন্যাস এরিষ্টটল নিজ হাতে করেননি। প্রধানত এই কারনেই Politics কে অসম্পুর্ন গ্রন্থ বলে মনে করা হয়। Politics গ্রন্থে দেখা যায়, রাষ্ট্র সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পুস্তকে আলোচনা করেছেন যা সুস্পষ্ট ভাবে বিন্যাস হয়নি। Politics পুস্তকের বিন্যাসের এই এলোমেলো ক্রমের প্রধান কারন হল, তিনি তার গ্রন্থ খানি সাধারন্যে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে রচনা করেননি। প্রকাশনার উদ্দেশ্যে তিনি যদি তার পান্ডুলিপিটি পুনঃ পর্যালোচনা করার সুযোগ পেতেন তাহলে সম্ভবত বিন্যাসের এই ত্রুটি থাকত না এবং তাতে পাঠক সমাজের অসুবিধার কোন কারন হত না।
এরিষ্টিটল ছিলেন একজন বাস্তববাদী দার্শনিক। তিনিই প্রথম রাজনৈতিক অধ্যয়নকে বিঞ্জান পদবাচ্য করে তোলেন। এরিষ্টটল যখনই যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছিলেন তখনই তাকে ইতিহাস ও বাস্তব অভিঞ্জতার প্রেক্ষিতে যাচাই করেছেন। বস্তুত তার Politics গ্রন্থটি মূলত প্রায় দেড় শতাধিক রাষ্ট্রের বাস্তব শাসন ব্যবস্থার পর্যালোচনলব্ধ অভিঞ্জতার ভিত্তিতে গঠিত হয়। এরিষ্টটলের পদ্ধতি ছিল মূলত আরোহ প্রকৃতির (Inductive)। এই পদ্ধতির মূল কথা হল প্রথমে একটা প্রকল্প বা অনুমান গ্রহণ করা এবং পরে থাকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে নানা প্রকার তথ্য সংগ্রহ করা। এগুলো পর্যবেক্ষন ও বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। তিনি ইতিহাস সমর্থিত ঘটনা সমূহের তুলনামূলক (Comparative) বিশ্লেষনের পদ্ধতি অনুসরন করেন। এরিষ্টটল অনুসৃত পদ্ধতিকে অভিঞ্জতামূলক (Empirical) পদ্ধতিও বলা যায়। তাছাড়া এরিষ্টটল তার অনুসৃত পদ্ধতিতে উদ্দেশ্যবাদের (Teleology) উপর যথেষ্ট গুরুত্ত আরোপ করেন।
যেহেতু ‘The Politics” গ্রন্থের পুস্তক বিন্যাস এলোমেলোভাবে সাজানো, তাই আমরা পুস্তক অনুসারে পর্যালোচনা না করে বিষয়বস্তু অনুসারে পর্যালোচনা করছি। Politics গ্রন্থে রাষ্ট্রের প্রকৃতি, রাষ্ট্রের উদ্ভব, তার উপাদান, রাষ্ট্রের অধিবাসীদের শ্রেনীবিভাগ, তার শাসন ব্যবস্থার সংবিধান, শাসন ব্যবস্থার প্রকারভেদ, শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক, শাসক ও নাগরিকের সংঞ্জা, দাসব্যবস্থের পক্ষে যুক্তি প্রদান, রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার অস্থিরতা, বিদ্রোহ ও বিপ্লবের সম্ভাব্য কারন এবং সে কারন প্রতিরোধের উপায়- এই সমস্ত বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
এরিষ্টটল রাষ্ট্র ও সংবিধান বলতে এক জিনিস বুঝিয়েছেন। সংবিধানের সংঞ্জা নির্দেশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা সমূহের বিন্যাস ব্যবস্থা। Politics গ্রন্থের ১ম পুস্তকের ১ম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, সংস্থা মাত্রই লক্ষ সেখানে কোন উত্তম সাধন করা, সেখানে সে সংস্থা সকল সংস্থার সেরা এবং অপর সকল সংস্থা সে সংস্থার অন্তর্গত, সে সংস্থার লক্ষ হচ্ছে চরম উত্তমের সাধন এবং এরুপ সংস্থাকে আমরা রাষ্ট্র বলে অভিহিত করি। তার মতে সংবিধানের পরিবর্তন রাষ্ট্রের পরিবর্তন সূচিত করে। সংবিধান ও রাষ্ট্রের এই অভিন্নতা পক্ষান্তরে রাষ্ট্র ও দলের অভিন্নতার নামান্তর। কারন নতুন দল ক্ষমতায় এসে যদি সংবিধানের মধ্যে পরিবর্তন করে তাহলে রাষ্ট্রের মধ্যে পরিবর্তন হয়।
কিন্ত রাষ্ট্র ও দলের অভিন্নতা বর্তমানে সমর্থন করা যায় না। কারন দল চাইলেই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে না। বর্তমানে কল্যানমূলক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার জন্য সকল দল ও গোষ্ঠীর সমর্থন আবশ্যক। সংবিধান পরিবর্তনে বিরোধী দল অবশ্যই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
এরিষ্টটল প্রথমত দুইটি মূলনীতি অনুসারে সংবিধানকে ভাগ করেছেন-
  • ১ম টি, সংবিধানের লক্ষ ও উদ্দেশ্যে অনুসারে এবং
  • ২য় টি, শাসকের সংখ্যা অনুসারে।
লক্ষ ও উদ্দেশ্যের পার্থ্যক্য অনুসারে সংবিধান দুই প্রকারঃ
  • ১ম টি, শুদ্ধ
  • ২য় টি, বিকৃত
উভয় প্রকার সংবিধানে সার্বভৌম ক্ষমতা যাদের উপর ন্যাস্ত থাকে তাদের সংখ্যা অনুসারে সংবিধানকে আবার তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত করেছেন। যথা-
  • ১ম টি, একের শাসন
  • ২য় টি, কতিপয়ের শাসন
  • ৩য় টি, নাগরিক সাধারনের শাসন।
ফলতঃ এরিষ্টটল সংবিধানের যে শ্রেনী বিভাগ করেছেন তার মোট সংখ্যা মূলত দাড়াচ্ছে ছয় প্রকার। নিচে এগুলো টেবিল আকারে দেয়া হল-
শাসকের সংখ্যাশুদ্ধবিকৃত
একজনের শাসনরাজতন্ত্রস্বৈরতন্ত্র
কতিপয়ের শাসনঅভিজাততন্ত্রধনিকতন্ত্র
নাগরিক সাধারনের শাসনপলিটিগণতন্ত্র
বাস্তব দৃষ্টিকোন থেকে সর্বপ্রকার সংবিধানের তুলনামূলক বিশ্লেষন করে তিনি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রচলিত সংবিধানের মধ্যে ‘পলিটি’ সর্বোত্তম।পলিটি কোন বিচ্যুত ব্যবস্থা নয়। পলিটি হচ্ছে ধনিকতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের একটি মিশ্রিত রুপ। পলিটি হচ্ছে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে সংবিধানের স্থায়িত্ব বিদ্যমান, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গ্রহণযোগ্যতা বিরাজমান, রয়েছে শাসক শাসিতের মধ্যে সন্দেহ অধিকারের অনুপস্থিতি এবং সংখ্যা ও গুণের ভারসাম্য।
কিন্ত বর্তমান কালে দেখা যায় যে, রাষ্ট্র সমূহে গণতন্ত্র সর্বোত্তম। কারন জনগনের শাসন দ্বারা শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।
আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিষ্টটল Politics গ্রন্থের সপ্তম ও অষ্টম পুস্তকে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথম পর্যায়ে প্লেটোর মতই দ্বান্দিক বিশ্লেষনের পদ্ধতিতে আদর্শ রাষ্ট্রের অনুসন্ধানে ব্রতী হন, কিন্ত গণতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রের পরস্পর বিরোধী দাবির পর্যালোচনা থেকে তিনি যখন উপলব্দি করেন যে, এ ধরনের আদর্শ রাষ্ট্রের অনুসন্ধানের একটি অবাস্তব প্রয়াস, তখন তিনি তা পরিত্যাগ করেন এবং বাস্তবে সম্ভবপর সরকার সমূহের মধ্যে যেটি সর্বোত্তম সেটির সমস্যা নিয়ে তিনি আলোচনা শুরু করেন। এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, মানুষের সৎ জীবন নিশ্চিত করাই আদর্ষ রাষ্ট্রের লক্ষ এবং এই লক্ষ অর্জনের জন্য শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারে কতগুলো শর্ত পালিত হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে লক্ষনীয় যে, এরিষ্টটল আদর্শ রাষ্ট্রের আলোচনায় সরকারের কোন উল্লেখ করেন নি। কিন্ত বাস্তবে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি সরকারের কথা উল্লেখ করেন। আদর্শ রাষ্ট্র সম্পর্কে এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, তা অবশ্যই আদর্শগত সদগুন দ্বারা শাসিত হবে এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরাই শাসন পরিচালনা করবেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, শাসক যদি সদগুনের অধিকারী হয় তাহলে সে গণতন্ত্র হবে রাজনৈতিক অন্যথায় তা হবে অভিজাত তান্ত্রিক।
এরিষ্টটল তার সর্বোত্তম রাষ্ট্রের চারিত্রিক অখন্ডতা রক্ষাকল্পে কতিপয় বস্তুগত ও সামাজিক শর্ত আরোপ করেছেন।
প্রথমত, এই রাষ্ট্রের অধিবাসীর সংখ্যা এরুপ হতে হবে যাতে তা আইন শৃঙ্খলাজনিত সমস্যার সৃষ্টি না করে স্বয়ংসম্পূর্নতার প্রয়োজন মিটাতে পারে।
এছাড়া, এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থের ৭ম অধ্যায়ে বলেছেন, রাষ্ট্রীয় ভুখন্ডের আয়তন হবে মাঝারি ধরনের- না খুব বড়, না খুব ছোট। ভূখন্ডের আয়তন এমন হতে হবে যাতে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে রাষ্ট্র হবে সমূদ্রকূল সংলগ্ন। তথাপি সামরিক নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের অর্থনীতি এই উভয় দিক থেকে নগরীর সাথে সমূদ্রের যোগাযোগ কাম্য। সর্বোত্তম রাষ্ট্রে নাগরিকদের বৈশিষ্ট্য হবে মিশ্র প্রকৃতির। আদর্শ রাষ্ট্রে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে আইনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। আইনের শাসনের মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ উন্নয়ন সম্ভব। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা, রজনৈতিক কর্মতৎপরতার অনুকূল পরিবেশ এবং ব্যাপক সৌন্দর্যবোধ বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখার কথা বলেন। রাষ্ট্রে বিবাহ ব্যবস্থা সরকারী মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা ব্যবস্থার কথা তিনি বলেন।
Politics এর প্রথম পুস্তকে এরিষ্টটল বিপ্লবের বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে আলোচনা করার পর কিভাবে তা এড়ানো যায় তার একটি পন্থা নির্দেশ করেছেন। বিপ্লব শব্দটি তিনি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। তার ফলে যেকোন রকমের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিপ্লবের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গণতন্ত্র, ধনিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, অভিজাততন্ত্রের যেকোন পরিবর্তন, সংবিধানের যেকোন সংশোধন- এককথায় সরকার বা সংবিধানের যেকোন পরিবর্তনকে তিনি বিপ্লবের আওতাভুক্ত করেছেন। এরিষ্টটল বিপ্লবের বর্ণনা করতে গিয়ে গ্রীক স্টাটিস শব্দটি ব্যবহার করেছেন। স্টাটিস শব্দটির সঠিক ভাষান্তর বিপ্লব নয়। “স্টাটিস বলতে এমন একটি অস্তির অবস্থাকে বুঝানো হয়, যে অস্থির অবস্থাতে হিংসাত্বক বিস্ফোরন অবশ্যম্ভাবি হয়ে উঠে”। (৫ম পুস্তক, প্রথম অধ্যায়)। সুতরাং স্টাটিস শব্দের অর্থ বিপ্লব না হয়ে আস্থিরতা বা পরিবর্তনশীলতা হতে পারে। বিপ্লবের উদ্ভব ও শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন কিভাবে এক্ষেত্রে এরিষ্টটল কতগুলো কারন উল্লেখ করেছেন।
কারণ সমূহ হলঃ
  • সাধারন কারণ
  • বিশেষ কারণ।
সাধারন কারণকে আবার তিনি তিনভাগে ভাগ করেছেনঃ
  • মনস্তাত্বিক উদ্দেশ্য;
  • মুনাফা ও সম্মান লাভের বাসনা;
  • প্রাথমিক অবস্থান সমূহ।
মনস্তাত্বিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেছেন, যারা সমতার জন্য উদগ্রীব তারা যদি বিশ্বাস করে যে, তারা যদি অধিকতর যারা পাচ্ছে তাদের সমান তথাপি তারা কম পাচ্ছে তবে তারা বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সমাজে কোন অংশ যদি মনে করে যে, তাদের প্রতি ন্যয়বিচার করা হচ্ছে না তখনি তারা বিপ্লবী হয়ে উঠে।
ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তারা যখন অত্যাচারী হয়ে উঠে এবং যখন তারা নিজেরা মুনাফা অর্জন করতে থাকে তখন যেমন পরস্পরের বিরোদ্ধে আঘাত করে। বর্তমান যে শাসন ব্যবস্থা তাদের ক্ষমতার উৎসের বিরুদ্ধেও আঘাত আনে।
বিপ্লবের বিশেষ কারণের মধ্যে রয়েছেঃ-
  • ধনিকতন্ত্রে বিপ্লব সংঘটিত হয় মূলত জনতার প্রতি অন্যায় ও অত্যাচারমূলক আচরন করার ফলে এবং কিছুটা ধনিদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে।
  • পলিটির মধ্যে গণতন্ত্র ও ধনিকতন্ত্রীদের যে সমন্বয় সাধিত হয় তার ত্রুটিপূর্ণ ভারসাম্যের ফলে পলিটির মধ্যে বিপ্লবের সূচনা হয়।
  • বর্ণগত, জাতিগত বিরোধ থেকেও বিপ্লব ঘটতে পারে। তাছাড়া ক্ষমতা যখন এক বা একাধিক ব্যক্তির হাতে অধিকমাত্রায় কেন্দ্রীভূত হয়, তখন বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকে।
  • অনেক সময় ভোটাধিকার বিন্যাসের সময় বিপ্লবের উদ্ভব হয়।
বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থায় বিপ্লব সংঘটিত হয়, যেমনঃ গণতন্ত্রে বিপ্লবের অন্যতম কারণ হচ্ছে জননেতাদের চরিত্রহীনতা। আর কতিপয়তন্ত্রে প্রতি বিরোধীতাই হচ্ছে কতিপয়তন্ত্রে জন্য সবচেয়ে বড় কারণ। কতিপয়তন্ত্রে বিপ্লবের আরেকটি কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব।
অভিজাততন্ত্রে বিপ্লবের প্রধান কারন হচ্ছে এখানে যোগ্যতর লোকের সংখ্যা কম।
রাজতন্ত্রে বিপ্লব দেখা যায়- প্রথমত, রাজপরিবারের অভ্যন্তরীন বিরোধের ফলে, দ্বিতীয়ত, রাজা যখন রাজ্যের প্রথাগত ঐতিহ্য ও নিয়মের ব্যতিক্রম করে সেচ্ছাচারী হয়ে উঠে তখন জনগন বিদ্রোহী হয়ে উঠে।
এরিষ্টটল ৫ম পুস্তকের ৮ম অধ্যায়ে শাসন ব্যবস্থা সংরক্ষন তথা বিপ্লব প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
  • শাসন ব্যবস্থায় যারা অংশগ্রহণ করে তাদের এবং নিজেদের মধ্যে আচরনের মধ্যে তারা গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রদর্শন করতে হবে।
  • আইনহীনতা ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • গণতন্ত্রে ধনিকদের প্রতি সুবিবেচনা প্রদর্শন করতে হবে।
  • কতিপয়তন্ত্রে যারা স্বচ্ছল নয় তাদের স্বচ্ছলতার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • ধনিকতন্ত্র ও অভিজাততন্ত্রের মধ্যে গণতন্ত্রে মেজাজ রক্ষা করতে হবে এবং কিছু কিছু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
  • ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা যাতে গজিয়ে উঠতে না পারে- শ্রেনীগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ লাভের ব্যাপারে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
এরিষ্টটল বিপ্লবের কারণ বিশ্লেষন ও তার নিবারনের পন্থা নির্দেশ করতে গিয়ে যেসব মতামত ব্যক্ত করেছেন সেগুলো যদিও তৎকালীন গ্রীক নগররাষ্ট্র গুলোর অবস্থার প্রেক্ষিতে করা হয়েছে তথাপি এর উল্লেখযোগ্য অংশ বর্তমানেও কার্যকর রয়েছে। আধুনিক কালে যে কয়টি বৃহৎ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর পিছনে এরিষ্টটল প্রদর্শিত মনস্তত্ব সম্পূর্নরুপে বিরাজমান। যখন দেশের অধিকাংশ লোকের মনে যখন বঞ্চনার মনোভাব তীব্র আকার ধারন করে তখন তারা বিপ্লবের মাধ্যমে তার অবসান ঘটাতে প্রয়াস পায়। উদাহরনসরুপ যে রক্তাক্ত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে তার মধ্যেও আমরা বহু মূর্ত অভিব্যক্তি প্রত্যক্ষ করেছি। শুধু বিপ্লবের কারণ বিশ্লেষনই নয় বিপ্লব এড়ানোর জন্য যেসব পন্থা নির্দেশ করেছেন সেগুলো আধুনিক বিপ্লব নিবারনের পন্থা হিসেবে সম্পূর্ন প্রযোজ্য।
এরিষ্টটলের চিন্তাধারায় দাসপ্রথা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে। শুধু আইন গত দিক থেকেই নয়, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দাসপ্রথাকে একটি ন্যায়সঙ্গত প্রথা বলে ঘোষণা করেছেন। দাসপ্রথা প্রকৃতির একটি শাশ্বত নীতিরই ফলশ্রুতি এবং এই নীতি হচ্ছে আদেশ ও আনুগত্যের সমন্বয়। এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থের প্রথম পুস্তকের ৫ম অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে দাসত্ব প্রাকৃতিক। প্রকৃতির সর্বত্রই শাসক এবং শাসিতের সম্পর্ক বিদ্যমান। মানুষের মধ্যে এমন মানুষ আছে যাদের যুক্তির বোধ নাই, কিন্ত যুক্তি অনুধাবনের ক্ষমতা আছে। এরাই হচ্ছে প্রাকৃতিক দাস। এরিষ্টটলের মতে কিছু লোক প্রঞ্জার অধিকারী এবং এই প্রঞ্জার বলে তারা শুধু আদেশ প্রদানে সক্ষম আর কিছু লোক দৈহিক বলের কারণে কায়িক পরিশ্রমে সক্ষম। প্রথম শ্রেনীর লোকেরা হচ্ছে প্রভু, দ্বিতীয় শ্রেনীর লোকেরা হচ্ছে দাস। অতএব, প্রভু এবং দাসের যে সম্পর্ক তা হচ্ছে আদেশ প্রদান ও আদেশ মান্য করার সম্পর্ক। এরিষ্টটল বিশ্বাস করেন যে, প্রভু ও দাস উভয় শ্রেনীর লোকের কল্যানার্থে দাস প্রথা যুক্তিসঙ্গত। প্রভুর দিক থেকে দাস প্রথা কল্যানকর বহু কারণে যে উন্নত মানের নৈতিক জীবন গঠন করার উদ্দেশ্যে প্রভুদের জন্য দৈহিক পরিশ্রম থেকে যে বিমুক্তির প্রয়োজন তা একমাত্র দাসেরাই প্রদান করতে সক্ষম। আর দাসের দিক থেকে তা কল্যানকর এই কারণে যে প্রভুদের জন্য দাস বৃত্তি করে পরোক্ষভাবে তাদের গুণাবলির দ্বারা উপকৃত হয়। সুতরাং দাস প্রথা প্রভু ও দাসের পারস্পরিক কল্যান নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এরিষ্টটল দাস প্রথাকে দুটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। প্রথমত, দাস প্রথা নাগরিক সংঞ্জারই অবশ্যম্ভাবি পরিণতি। পূণ্যশীল জীবন গঠন করাই নাগরিকের প্রধান দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পরিপূর্ন ভাবে পালন করতে হলে থাকে দৈহিক পরিশ্রম থেকে বিমুক্তির প্রয়োজন যা দাস প্রথার মাধ্যমে সম্ভব। দ্বিতীয়ত, দাসরা হল প্রভুর জীবন্ত সম্পদ ও কর্ম সম্পাদনের উপাদান। এরিষ্টটল তার Politics গ্রন্থে প্রভু ও দাসের যে সম্পর্কের কথা বলেছেন তা হলঃ স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক, পিতা-মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক, প্রভুর সাথে দাসের সম্পর্ক।
এরিষ্টটল দাস প্রথাকে শুধু যে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে গ্রহণ করে নিয়েছেন তাই নয়, তিনি এই প্রথার নৈতিক যথার্থতা প্রমানের চেষ্টা করেছেন। কিন্ত তার এই মতাবাদ মানবজীবন সম্পর্কে ভ্রান্ত নীতিরই ফলশ্রুতি। তার দাস প্রথার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে এই প্রথা একটি মানবতা বিরোধী প্রথা। শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়ে অন্যের উপর প্রভুত্ব করা অন্যায়, অমানবিক এবং অযৌক্তিক। যারা কায়িক পরিশ্রম করতে পারে তার প্রঞ্জার অধিকারী নয়, শুধুই শারিরীক বলে বলীয়ান- এরূপ একতরফা মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান সময়ে দেখা যায় যে নিকৃষ্ট শ্রেনীর একটি লোক তার মেধা ও প্রতিভা বলে সমাজ ও রাষ্ট্রের শীর্ষে উপনীত হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক যুগে যেখানে সার্বজনীন মানবতার নীতি স্বীকৃত, সেখানে এরিষ্টটলের দাসপ্রথাকে কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গণতন্ত্র ও সাম্যের নীতির বিপরীত অবস্থাই হচ্ছে এই দাস প্রথা।
এরিষ্টটল তার Politcs এর তৃতীয় পুস্তকে নাগরিকের যে সংঞ্জা নির্দেশ করেছেন তাতে বাসস্থানের বৈধ অধিকার ভোগ কিংবা জমিগত অধিকার কোনটি নাগরিকতার যথার্থ সংঞ্জা নির্দেশক নয়। এরিষ্টটল বলেছেন আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলে অভিহিত করব যাদের উক্ত রাষ্ট্রের আইন প্রনোয়ন মূলক বা বিচার বিশ্লেষন কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে এবং সাধারন ভাবে বলতে গেলে রাষ্ট্র সেইসব নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত এমন একটি সংসার যা জীবনের লক্ষ অর্জনের জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া তিনি Politics এর তৃতীয় পুস্তকের ১ম, ২য়, ৪র্থ এবং ৫ম অধ্যায়ে নাগরিক ও নাগরিকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
এরিষ্টটলের দেয়া তত্ত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কার্যে যারা প্রত্যক্ষ ভাবে অংশগ্রহণ করে তারাই নাগরিক। তিনি সুস্পষ্টভাবে দাস, শ্রমজীবী, নারী, কারিগর এবং বিদেশীদের নাগরিক নন বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন- ‘দাসগন’ তারা রাষ্ট্রে বসবাস করে কিন্ত দাসরা নাগরিক নয়।
শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করা এবং শাসন মান্য করার যোগ্যতা উত্তম নাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
এরিষ্টটল শ্রমিকদের নাগরিকতার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেননি। কিন্ত বর্তমান যুগে দেখা যায় ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ সবারই নাগরিক অধিকার ভোগের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে তার যুক্তি অবাস্তব। এরিষ্টটলের নাগরিকতার ধারনা একটি রক্ষণশীল ও অভিজাততান্ত্রিক ধারনা ছিল। তিনি নাগরিকতার তত্ত্বের মাধ্যমে শ্রেনী বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। যেমন- নাগরিক শ্রেনী এবং অনাগরিক শ্রেনী। কিন্ত তার বিভক্তির নীতি গুলো সম্পুর্নভাবে অসমতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
এরিষ্টটল তার আদর্শ রাষ্ট্রের আলোচনায় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমন্ডলিকে গুরুত্ত্ব দেয়ার পরিবর্তে আইনের উপর বেশ গুরুত্ত্বারোপ করেছেন। Politics গ্রন্থের ৪র্থ পুস্তকের ৩য় অধ্যায়ে বলা আছে আইন যেখানে শাসন করে না সেখানে কোন শাসন ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। সরকারি শাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় তিনি নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
এরিষ্টটল তার ‘The Politics” গ্রন্থের মধ্যে সম্পত্তির সংঞ্জা, প্রকৃতি, সম্পত্তি আহরনের কৌশল এবং সম্পত্তি উচ্ছেদ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন সম্পদ হচ্ছে পরিবার বা রাষ্ট্রের কাজে ব্যবহারের নিমিত্ত গচ্ছিত কতগুলো অস্ত্র বা অস্ত্রের ভান্ডার। এই অস্ত্র বা যন্ত্র সম্পর্কে সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে সম্পত্তি ব্যতিত মানুষের পক্ষে জীবন ধার করা সম্ভব নয়। তাই জীবন ধারনের জন্য সম্পত্তি আহরনের প্রবৃত্তি মানুষের সহজাত। তার মতে যেহেতু সম্পত্তি একটি অস্ত্র এবং তার প্রধান লক্ষ হচ্ছে পরিবের বা রাষ্ট্রের মধ্যে সৎ বা নৈতিক জীবন গঠনে সাহায্য করা। অতএব, কী পরিমান সম্পত্তি আহরন করা হবে তার একটি নির্দেশ সীমা থাকবে। যখন এই সীমা অতিক্রম করা হবে তখন তা অস্বাভাবিক সম্পদ আহরনে পরিনত হবে। এব্যাপারে তিনি যে পন্থা অবলম্বন করেন তা মধ্যম পন্থা।
এরিষ্টটল Politics এর প্রথম পুস্তকে পরিবার সম্পর্কে বিষদভাবে আলোচনা করেছেন। তার মতে পরিবার মানুষের জৈবিক, অর্থনৈতিক প্রয়োজনের সার্বিক ফলশ্রুতি। যৌনক্ষুধা, আত্মসংরক্ষন ও আত্মপ্রবৃদ্ধি মানুষেকে পরিবার গঠনের পথে পরিচালিত করে। শুধু জৈবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবারের কাজ সীমাবদ্ধ নয়। পরিবার মানুষের প্রেম, প্রীতি, স্নেহ-ভালবাসা প্রবৃত্তি মানুষের নানাবিধ গুণাবলিরও একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান।
এরিষ্টটল অবসর বলতে যা বুঝিয়েছেন তা অবসর সম্পর্কে প্রচলিত ধারনার সম্পুর্ন বিপরীত। তার মতে যে পরিবেশে নাগরিকেরা সাংসারিক জীবনের ঝক্কি ঝামেলা দ্বারা বিভ্রত না হয়ে একাগ্রচিত্তে রাষ্ট্রীয় কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন এবং উন্নতমানের নৈতিক জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম হন। একেই তিনি অবসর বুঝিয়েছেন। এর অর্থ অবশ্যই এই নয় যে তাদের সাংসারিক জীবন বলতে কিছু থাকবে না। তাদের এই সংসার জীবনের যেকোন ঝামেলা দাসেরা বহন করবে এবং তাকে নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের সাধনায় সহযোগিতা করবে। এই ক্ষেত্রে অবসরের দুটি অর্থ বিদ্যমান। একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। নেতিবাচক হল দৈহিক শ্রম বা সাংসারিক ঝামেলা থেকে বিমুক্তি আর ইতিবাচক হল ঞ্জান অনুশীলন, কাব্যরচনা, নৃত্য এবং সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ক।
এরিষ্টটলকে সাধারনত জনগনের সার্বভৌমত্বের প্রাচীনতম প্রবক্তা বলে গণ্য করা হয়। তিনি অত্যন্ত্য দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, একজন কিংবা কতিপয়ের সদগুনই যতই বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন তা পরিমানগত বা গুণগত কোন দিক দিয়ে সম্মিলিতভাবেই সকলের সদগুণের সমান হতে পারে না। অতএব, একজন বা কতিপয় সঙ্ঘত ভাবেই রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারনের ব্যাপারে একচ্ছত্র অধিকারের দাবিদার হতে পারে না। এরূপ দাবি যদি কেউ করতে পারে তবে তা পারে একমাত্র রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সম্মিলিত ভাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, কনগনের সার্বভৌমত্বে সপক্ষে মত প্রকাশ করলেও তিনি আইনের সার্বভৌমত্ব নীতিরই সমর্থক। গণসার্বভৌমত্বের নীতি বলতে এরিষ্টটল যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হল এই যে একমাত্র জনসাধারন তাদের সম্মিলিত প্রঞ্জার বলে শাসকদের শাসনের গুণাগুন সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরন দিয়েছেন যে, “যারা খানা খায় বা সঙ্গীত শ্রবন করে, খানা ও সঙ্গীতের গুণাগূন সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই দিতে পারে। কিন্ত তার অর্থ এই নয় যে, তারা নিজেরা ভাল রান্না করতে পারে বা ভাল গান গাইতে পারে।
‘The Politics’ গ্রন্থে এরিষ্টটল বলেন যে নীতির ভিত্তিতে জনগনের মঘ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও অন্যান্য সুবিধা বন্টিত হয় সে নীতিই বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্যের কারন হিসেবে কাজ করে। আর এটাই আনুপাতিক ন্যায়বিচারের নীতি। আনুপাতিক ন্যায়বিচার নীতির নির্গলিত অর্থ হল, রাষ্ট্রের কল্যান সাধনে বা সৎ জীবন গঠনের ক্ষেত্রে যাদের অবদান বেশি অর্থাৎ যারা অধিক পরিমানে পৌর গুণের অধিকারী তারা অন্যান্য ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম গুণসম্পন্ন হলেও এক্ষেত্রে অধিক পরিমানে রাষ্টীয় ক্ষমতা ও সুবিধা লাভের অধিকারে।
এরিষ্টটল ৮ম পুস্তকের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম অধ্যায়ে সঙ্গীত সম্পর্কে আলোচনা করেন। সঙ্গীতকে চরিত্রের উপর প্রভাব বহনকারী উত্তমের উদ্দীপক হিসেবে মনে করা হয়। সঙ্গীতের নিশ্চয়ি বুদ্ধি ও সংস্কৃতি সম্পন্ন অবসর বিনোদনে একটি অবদান আছে। সঙ্গীত হচ্ছে সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং সুন্দর বিষয়ের অন্তর্গত। সঙ্গীতে ছন্দ ও সুরের ক্ষেত্রে বাস্তবের একটি ঘনিষ্ট সাদৃশ্য দেখা দেয়। এ বাস্তব হচ্ছে ভদ্রতা ও অভদ্রতা, সাহস ও সংযম এবং সকল গুণের বিপরীত তথা সকল নৈতিকজনের বাস্তবতা। সঙ্গীতের শিক্ষা এমন হবে না যাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের কার্যক্রমের উপর বিকৃত প্রভাব বিস্তার করে।
পলিটি ব্যবস্থাকে তিনি অবস্থার ভিত্তিতে উত্তম বলে চিহ্নিত করেছেন। পলিটি কোন বিচ্যুত ব্যবস্থা নয়। পলিটি হচ্ছে ধনিকতন্ত্র ওবং গণতন্ত্রের আরেকটি মিশ্রিত রুপ। পলিটি হচ্ছে এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে সংবিধানের স্থায়িত্ব বিদ্যমান, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর গ্রহণযোগ্যতা বিরাজমান, রয়েছে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সন্দেহ থাকিবার অনুপস্থিতি এবং সংখ্যা ও গুণের ভারসাম্য।
এরিষ্টটল তার “The Politics” গ্রন্থের জন্য দেশে বিদেশে নানা ভাবে সমালোচিত হয়েছেন। যদিও তার অবদান অনস্বীকার্য তথাপি তার তথ্যে যথেষ্ট ত্রুটি লক্ষ করা যায়। প্রথমত তার পুস্তক বিন্যাস এলোমেলো ভাবে সাজানো যা পাঠক সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তিনি বিশ্বাস করতেন একমাত্র গ্রীসের লোকেরাই সদগুণের অধিকারী। আর করো মধ্যে এই সদগুণই থাকতে পারে না। এই কারনে তিনি বিশ্বের সকল অগ্রীসীয় লোককে অসভ্য বলে অভিহিত করেছেন। যা তার সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। দাসপ্রথা সক্রান্ত এরিষ্টটলের মতবাদ গণতান্ত্রিক সমাজে অচল। প্রকৃতি কাউকে দাস আর কাউকে প্রভু করে সৃষ্টি করেনি। এরিষ্টটল শুধু দাসদের বিরোধিতা করেছেন এমন নয়, তিনি দাস ও প্রভুর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তিনি জোরপূর্বক কাউকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না। তিনি তার বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রে মধ্যবিত্তের শাসনের কথা বলেন কিন্ত বিশ্বের কোথাও মধ্যবিত্তের শাসন লক্ষ করা যায় না। তাই তা সমালোচিত। এরিষ্টটল সরকারের শ্রেনীবিভাগের ক্ষেত্রে সংবিধান ও সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নি। কিন্ত বর্তমানে সরকার ও সংবিধান দুটি আলাদা বিষয়। তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে পলিটির কথা বলেছেন তা বাস্তবায়ন যোগ্য নায়। পলিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি মিশ্র প্রকৃতির। তাছাড়া তিনি গণতন্ত্রকে নিকৃষ্ট শাসন বলে আখ্যায়িত করেন কিন্ত সারা বিষ্বেই আজ গণতন্ত্রই সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত। তিনি শ্রমজীবি মানুষদের নাগরিকতার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন নি যা বর্তমান সমাজ বিকাশে অচল। এছাড়া তিনি করারোপ, সরকারী ঋণ, স্থায়ী সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী, আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোকে উপেক্ষা করেন।
মোট কথা হল এই যে, তিনি একজন বাস্তব বাদী দার্শনিক। তাঁর Politics গ্রন্থে এমন অনেক মূল্যবান উপাদান দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো কালোত্তির্ন ঐতিহ্যের মর্যাদা দান করেছে এবং মধ্যযুগ ও বর্তমান যুগের বহু মনীষির চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
আজ আর না। অন্যকোন দিন অন্যকোন হারিয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ।
Blogger Widgets..